গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের জন্য পিরোজপুরে উলামা পরিষদের দোয়া মাহ্ফিল
পিরোজপুর উলামা পরিষদের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের জন্য আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল (২০ আগস্ট) মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় পিরোজপুর পৌরস্থ তালীমুল কুরআন মাদরাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের আমীর মুফতি ওয়াহিদুল আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী ও মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজীর যৌথ সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, আল্লাহ তায়ালা স্বৈরশাসকের জুলুম ও নির্যাতনের কবল থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। কোন দুষ্কৃতিকারী যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর কোন ধরনের হামলা করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তারা বলেন, দেশে বিদেশে পলাতক আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্র জনতার অবিস্মরণীয় এই বিজয় নস্যাতে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে। দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ওদের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। নবগঠিত উপদেষ্টা পরিষদের কেউ কেউ ছাত্র জনতার সেন্টিমেন্টের বিপরীত কথাবার্তা বলছেন। অবিলম্বে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। ছাত্র জনতার এই বিজয় ও স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিপর্যস্ত অবস্থা এখনও কাটিয়ে না ওঠায় দেশের নানা প্রান্তে ভাংচুর, ডাকাতি ও অস্থিরতা চলছে। নানা ধরনের খারাপ খবর আসছে; এতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে এসব প্রতিরোধে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ তিন বাহিনীর প্রধানকে আরো ব্যাপক নিরাপত্তা পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ দেশের জনগণের সম্পদ। এ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি যেন কেউ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
স্বৈরাচারের কারাগারে পিরোজপুরের কৃতি সন্তান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী রহ. শহীদ হওয়ার পর ব্যথিত হৃদয়ে তার স্মরণে পিরোজপুর উলামা পরিষদ একটি বিবৃতি দিয়েছিল। আওয়ামী বাকশালী সরকার সেটা সহ্য করতে পারেনি। ওই বিবৃতি প্রত্যাহারে তারা চাপ প্রয়োগ করলেও পিরোজপুর উলামা পরিষদ মাথা নত করেনি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, সেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে তিনি আমাদের মুক্তি দিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কোটা সংস্কারের পক্ষে আলোচনা করায় যেসব ইমাম খতীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অবিলম্বে তাদের পুনর্বহাল করতে হবে। ৫ মে শাপলা চত্বরে গনহত্যা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গনহত্যা সহ আওয়ামী আমলে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের জাতীয় বীর ঘোষণা করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
পিরোজপুর উলামা পরিষদ নেতৃবৃন্দ উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে যার যার জায়গায় ঐক্যবদ্ধভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মুনীর, নায়েবে আমীর মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন কাসেমী, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা জাকির হোসাইন, মাওলানা আব্দুল জলিল, মাওলানা হাফিজুর রহমান, মুফতি মিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মনিরুল হাসান, মাওলানা আতিকুর রহমান, হাফেজ মাওলানা দবির হোসাইন, মুফতি বেলাল হোসাইন, মুফতি জহিরুল ইসলাম, মাওলানা ইদরিস আহমাদ, মাওলানা নাছির উদ্দীন প্রমুখ। ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মাদ রেদওয়ান, মুহাম্মাদ মুঈনুদ্দীন, মুহাম্মাদ আহসানুল হক, তানজিম ও মানজুরুল আজিজ। আলোচনা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।