নিয়োগ বানিজ্যেসহ অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এ.এ.এম হৃদয় | ২০:৪১, আগস্ট ১৯ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার কেওতা ঘিগড়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ অলিউল্লাহর বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যেসহ অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অধ্যক্ষসহ ঘুষ বানিজ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫ শিক্ষক-কর্মচারির অপসরনের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে মাদ্রাসার সামনের সড়কে ও মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়ে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকাবাসী ও চাকরি বঞ্চিতরা অংশ নেন।
আন্দোলনকালীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদেরর আন্দোলনে যেতে  বাধা দেয়াসহ উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারিসহ ৫ পদে ৩০-৩৫ লাখ টাকা নিয়োগ বানিজ্য, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি করে কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেছে।
আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আমলে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিয়ে মাদ্রাসায় লুটপাট ও অরাজগতা সৃষ্টি করে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ১৫দিন ধরে আত্মগোপনে থেকে ছাত্রদের নানান হুমকি দেয়ার কারনে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে দু দিন ধরে লাগাতার কর্মসূচী পালন করছে।
১৯৪৭ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। তিনি যোগদানের পর ৮ বছর ধরে উপাধ্যক্ষসহ ৫টি পদে নিয়োগ দেন। মাদরাসা  নিয়োগের প্রতিটি পদে মোটা অংকের উতকোচ গ্রহণ করেন তিনি।
জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানের মাদ্রাসার নামে প্রাপ্ত বরাদ্দ আত্মসাত, নুরানী শাখার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বেতন আত্মসাত করে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য, এতিমখানায় শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রাপ্ত বরাদ্দসহ সবমিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেন তিনি। মাদ্রাসার বায়োজ্যষ্ঠ কর্মচারী নুরুল হক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় চাকরি করি। আর মাত্র এগারো মাস আমার চাকরি আছে।  স্বাক্ষর করতে গেলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অলিউল্লাহ তাকে স্বাক্ষর করতে দেয় নাই। স্বাক্ষর করতে দুই লাখ টাকা দাবী করে। নইলে স্বাক্ষর করতে দেবে না।
এলাকাবাসী জানান, তিনি মাদরাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ অস্থির প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছেন। যোগ্যতা, দক্ষতা যাচাই না করে নিকটাত্মীয়কে বরগুনা থেকে আমদানি করে মাদ্রাসায় চাকরি দেয়। অধ্যক্ষের আচরণে সে চাকরি ছেড়ে চলে যায়।
এছাড়াও মাদ্রাসায় এনটিআরসি থেকে নিয়োগ হওয়ায় শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দিতে গড়িমসি করে। প্রায় এক বছর বিনা বেতনে চাকরি করিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করে নিয়োগপত্র প্রদান করে। দোষ চাপিয়ে রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগপত্র হস্তান্তর করে।
তারা আরো জানান, মাদ্রাসার আয়-ব্যয়সহ সব ধরনের হিসাব অধ্যক্ষ নিজেই সংরক্ষণ করেন। কারো কাছে কোন দায়িত্ব দিলে যদি তার ভুয়া বিল-ভাউচার প্রকাশ হয়ে যায়। বাইরের মানুষের সাথে যখন কথা বলে তখন খুবই ভালো ও সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলে। ঠিক তারই উল্টো আচরণ মাদ্রাসার সহকর্মী ও অধীনস্থদের সাথে। কর্মচারী নুর“ল হক স্ট্রোকের রোগী। তার চাকরিও বেশি দিন নাই। এখন যেভাবে তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবী করেছে তাতে যেকোনো সময় পুনরায় স্ট্রোক করে মারা যাবার আশঙ্কা করেন তিনি।
অভিভাবক রিক্সাচালক রফিকুল ইসলাম জানান, ছেলের সার্টিফিকেট নিতে গেলে তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করে নেয়। ঘিগড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম জানান, অফিস সহকারি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে অধ্যক্ষ সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকা নিলেও ১০ লাখ টাকা নিয়ে ঘুষ নিয়ে ঘিগড়া গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে মিজানুর রহমা কে নিয়োগ দিয়েছে।
এখন বলতেছে তার কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরৎ দিবে। ঘিগড়া গ্রামের মোজাম্মেল তালুকদারের ছেলে আবুল হোসেন কাছ থেকে ধার বাবৎ এক লাখ ৫ হাজার টাকা নিয়ে তা আত্মসাত করেছে। ঘিগড়া গ্রামের সোবাহান তালুকদারের ছেলে  তারেক মনোয়ার অভিযোগ করে জানান, অফিস সহকারি পদে তার কাছে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে টাকা না দেয়ায় কারফিউর মধ্যে গত ৩ তারিখ আগস্ট পরীক্ষা নামেমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে মিজান নামে একজনকে দশ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিছে।
ফাজিল ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে জানান, অধ্যক্ষ আবাসিক শিক্ষার্থীরা না রেখে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের টাকা সে নিয়ে যেত। এভাবে নানা পদে পদে সে টাকা আত্মসাত করে আসছে। তার দ্রুত অপসরন দাবি করছি।
মাদ্রসার ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ ইলিয়াস জানান, তিনি সদস্য হবার পর অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে উপাধ্যক্ষ, ক্লার্ক দুই জন, বিজ্ঞান ও ল্যাব সহকারি একজন ও অফিস সহকারিসহ মোট ৫ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক নিয়োগে শুনেছি ৫ থেকে ৬ লাখ টানা নিয়েছে, আবার অনেক প্রাথর্ীরা বলছে টাকা দিয়েছি নিয়োগ হয়নি। কিন্তু অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইনে তিনি বলে কোন টাকা নেয়া হয়নি। তিনি এ নিয়োগ বাতিল দাবি করেন।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ অলিউল্লাহদ জানান, ওই এলাকার কালাম তালুকদার সাবেহসহ একটি মহল রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা আদৌ সত্য না বলেও দাবী করেন তিনি।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমীন জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি শুনেছি, মাদ্রাসায় গিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।