বরিশাল সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থবির, বন্ধ উন্নয়নকাজ

আল-আমিন | ১৮:০৩, আগস্ট ১৫ ২০২৪ মিনিট

বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার পতনের পর সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত। পাশাপাশি অন্তত ২০ জন কাউন্সিলর এলাকায় নেই। এ অবস্থায় নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে দলাদলি। অনেক কর্মচারী ইচ্ছামাফিক অফিসে আসছেন, যাচ্ছেন। ফলে একধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।   এদিকে সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনটি পুড়িয়ে দেওয়ায় বন্ধ রয়েছে শিশুদের টিকাদান ও মশকনিধন কার্যক্রম। একই সঙ্গে বিভিন্ন সনদ পাওয়াসহ নগরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজও থমকে আছে।   সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করার পর বরিশালের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা ও জনপ্রতিনিধি এলাকা ছেড়েছেন। মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ৩ আগস্টের পর আর তাঁর কার্যালয়ে আসেননি। তিনি কোথায় আছেন জানেন না করপোরেশনের কর্মকর্তারা। নগরের ২০টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররাও গা ঢাকা দিয়েছেন।     নগর ভবনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার পতনের পরই বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা করপোরেশনের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন। আর আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এত দিন প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন তাঁরা অনেকটা কোণঠাসা।   গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ইসরাইল হোসেনের কার্যালয়ে অবস্থান করে দেখা যায়, কর্মচারীরা বিভিন্ন ফাইল নিয়ে তাঁর কক্ষে অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পড়ছেন। তিনি নিষেধ করলেও শুনছেন না। তিনি কোনো নির্দেশনা দিলে কর্মচারীরা তা পাত্তা দিচ্ছেন না। একাধিক কর্মীর সঙ্গে তাঁর বচসাও হচ্ছে।     নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যার মতো গল্পগুজবে সময় কাটাচ্ছেন। চতুর্থ শ্রেণি ও মাস্টাররোলের কর্মচারীদেরও ব্যস্ততা নেই।   তবে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন বলেন, মেয়র অনুপস্থিত থাকলেও তাঁদের রুটিন কাজকর্ম চলছে। কোনো সমস্যা নেই।   বন্ধ ইপিআই ও মশকনিধন কার্যক্রম   করপোরেশনে শিশুদের টিকাদান (ইপিআই) ও মশকনিধন কর্মসূচি এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। ৪ আগস্ট দুর্বৃত্তদের আগুনে করপোরেশনের চারতলা অ্যানেক্স ভবন পুড়ে যায়। ওই ভবনে রাখা ইপিআই কর্মসূচি ও মশকনিধন কর্মসূচির সব সরঞ্জাম, নথিপত্র ও ওষুধপত্রও পুড়ে যায়।     এই বিভাগে অন্তত ১০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হতো। ১৫৪টি পয়েন্টের জন্য আইস বক্স, ফ্রিজ ও প্রায় ১ লাখ ভাওয়েল ওষুধ ছিল। সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর ফলে শিশুদের জন্মের পর পাঁচটি টিকাসহ অন্যান্য টিকা ও ভিটামিন খাওয়ানো কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।   সদর রোড এলাকার বাসিন্দা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ‘অশ্বিনীকুমার হলের টিকাদান কেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় আমার শিশুর টিকা দেওয়াতে পারছি না। এখন আমাদের হাসপাতাল থেকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’   সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পল্লবী সুলতানা জানান, সিটি এলাকার টিকা শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতাল থেকে নেওয়া যাবে।     করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়ার আগে দুর্বৃত্তরা লুটপাট করে ১২টি ফগার মেশিন নিয়ে যায়। তাঁরা এসব ফগার মেশিনের মধ্যে চারটি উদ্ধার করতে পেরেছেন। এখন তা দিয়েই মশকনিধন কার্যক্রম চলবে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থবির উন্নয়নকাজ   ২০২৩ সালের শেষ দিকে নগরের রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। গত ৬ মে পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে নগরের ৪০টি সড়ক ও নালা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত এক সপ্তাহ এসব কাজ বন্ধ রয়েছে। নগরের কালুশাহ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কের মোড়ে পাথরের বিশাল স্তূপ। সড়ক ঘুরে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ হচ্ছে।   আলী হোসেন নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আগে রাস্তা ভাঙাচোরা ছিল, বর্ষায় পানি জমে যেত। তাতে দুর্ভোগ হতো। কিন্তু এখন উন্নয়নের ফাঁদে পড়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। জানি না কবে এই রাস্তা হবে।’   বেতন বন্ধ   করপোরেশনে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৫৩৭ জন। আর অস্থায়ী আছেন ১ হাজার ২০০ জন। মেয়র অনুপস্থিত থাকায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাই মাসের বেতন-ভাতা পাননি।   সূত্র জানায়, করপোরেশনের বেতন-ভাতা ও আর্থিক বিষয়গুলো মেয়রের অনুমোদন প্রয়োজন। তাঁর স্বাক্ষর ছাড়া কোনো অর্থ ছাড় হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় হচ্ছে না। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে অস্থায়ী কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় চরম দুর্দশায় পড়েছেন। কবে নাগাদ বেতন-ভাতা পাবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। মেয়র অনুপস্থিত থাকলেও অর্থ ছাড় দিতে হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা ক্ষমতা দিতে হবে। এখন সেটা সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।   সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘আসলে মেয়র অনুপস্থিত, এতে কিছুটা তো সমস্যা হচ্ছেই। তবে আমরা নিয়মিত কার্যক্রমগুলো ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছি।’