মাঠ ছেড়ে ‘আত্মগোপনে’ পুলিশ

এ.এ.এম হৃদয় | ২১:২৭, আগস্ট ০৭ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এতে গত সোমবার দুপুরের পর থেকেই রীতিমতো চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে পুলিশ বাহিনীর। তবে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ লাইন্সে অবস্থান নেন বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ স্থাপনা ঘিরে হামলা চালানো শুরু করলেও পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে বিভিন্ন থানায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নানাভাবে থানা ও স্থাপনার ফোর্সও আত্মগোপনে চলে যায়। তবে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকগুলোতে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকে। কার্যত গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব থানাই পুলিশশূন্য ছিল। পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে কোনো পুলিশ সদস্যই ছিলেন না। বিমানবন্দরসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও পুলিশের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসার সহায়তা করছে।এদিকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে জানানো হয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের থানা, বিমানবন্দর ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আত্মগোপনে থাকা পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল্লাহ আল মামুন এক ভিডিওবার্তায় পুলিশের সব সদস্যকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ধৈর্যসহকারে নিজের নিরাপত্তা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। সবার সহযোগিতায় দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আইজিপির ওই বার্তা পাঠানো হয়। এদিকে ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের সকল সদস্যকে ছুটি’ দেওয়া সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি বার্তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রান্সপোর্ট) পুলিশ এ বি এম মাসুদের নামে ছড়ানো ওই বার্তায় বলা হয়, ‘এইমাত্র পুলিশ কমিশনার স্যার ফোন দিয়েছিলেন। স্যার সব ফোর্সকে ছুটি দিয়ে দিতে বলেছেন। ছুটির জন্য কাউকে সিসি নিতে হবে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ফোর্স ছুটিতে থাকবে। মাসুদ, জেসি ট্রান্সপোর্ট।’ গতকাল রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ‘ডিএমপির সকল ফোর্সকে ছুটি দেওয়া হয়েছে—মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক নয়।’ আত্মগোপনে থাকা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের মাঠে রেখে আত্মগোপনে গেছেন। মাঠের ফোর্স আর কর্মকর্তা কোনো নির্দেশনা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন থানায় আক্রমণ করে পুলিশ সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জীবন রক্ষার্থে তারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশের এই স্তরের কর্মকর্তাদের অনেকে তাদের ফেসবুকে রক্তমাখা পুলিশ লোগো পোস্ট করে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ডিউটি করবেন না বলে জানাচ্ছেন। রাজধানীর একটি থানার একজন ওসি বলেছেন, তার থানায় হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল মারতে থাকে। বাইরে থেকে গুলিও আসতে থাকে। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করতে থাকে। তাতেও টিকতে না পেরে তারা পোশাক খুলে পালিয়ে যান। যারা পালাতে পারেননি, তারা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পুলিশের সূত্র বলছে, বিভিন্ন থানা ও স্থাপনা থেকে পালিয়ে আসা কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক মর্যাদার অনেক সদস্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল দিনভর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ওই সদস্যরা ছাড়াও ব্যারাকের সদস্যরা দফায় দফায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিয়েছেন। তারা ‘নো সেফটি, নো ডিউটি’ স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে জনতা বা ছাত্রদের কোনো ঝামেলা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদ রক্ষায় তাদের জনগণের মুখোমুখি করেছে। দায়িত্বশীলরা সরে যেতে পারলেও এখন সাধারণ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। নিরাপত্তা না পেলে তারা আর ডিউটিতে যাবেন না।’ আত্মগোপনে থানা পুলিশের অন্তত দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, তারা জানমাল রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন; কিন্তু এখন পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। নির্মমভাবে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা জীবন রক্ষায় নিরাপদে রয়েছেন। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো অধিদপ্তর এলাকায় কোনো পুলিশ সদস্য নেই। শুধু পুলিশ ট্রাস্টের কয়েকজন নিরস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। যে কেউই চাইলে অধিদপ্তরের ভেতরে যেতে পারছেন। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। দুটি ভবনের দরজা-জানালায় ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। তবে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের গেট বা ভেতরে কাউকে দেখা যায়নি। ভিডিওবার্তায় যা বললেন আইজিপি: আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ভিডিওবার্তায় পুলিশের সদস্য ও পুলিশের স্থাপনায় আক্রমণ না চালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া বিভাগ থেকে পাঠানো ওই ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, পুলিশের সদস্য ও পুলিশের স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের ঘটনা সংঘটিত না করার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যেন সবাইকে আহ্বান জানান। এ আহ্বান জানানোর জন্য রাজনৈতিক নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতাদের বিনীত অনুরোধ করেন তিনি। আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের স্থাপনাসমূহের এবং পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের (পুলিশ বাহিনী) অহর্নিশ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’পুলিশ সদস্যদের দৃঢ় মনোবল ও নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যা এবং দাবির যৌক্তিক সমাধানকল্পে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুলিশের সব সদস্যকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ধৈর্যসহকারে নিজের নিরাপত্তা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।’ ভিডিওবার্তার শুরুতে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আমার প্রিয় বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্য, আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ পুলিশের যেসব সদস্য জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন, নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। যারা আহত অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।’ ‘নির্যাতিত’ পুলিশ কর্মকর্তাদের নামে সংবাদ সম্মেলন: এদিকে গতকাল রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে পুলিশ মেসে ‘নির্যাতিত পুলিশ কর্মকর্তাদের’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে বলা হয়, পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। তাই যোগাযোগ করতে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমানকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের চাকরিচ্যুত ডিআইজি খান সাঈদ হাসান বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশে কমান্ড দেওয়ার মতো এখনো কেউ নেই। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাকে রাখা হয়েছে। পুলিশ পুনর্গঠন করে স্বৈরাচারী সরকারের আজ্ঞাবহ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি বলেন, আমরা পুলিশ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনাসহ অন্যান্য সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া করণীয় সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। ফলে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কার্যক্রম চালু রাখার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুর রহমানকে বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কন্ট্রাক্ট পয়েন্ট হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের প্রাথমিক বিজয় অর্জন হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশের ৮০ শতাংশ সদস্য যারা নিরীহ ছিল, তারা শুধু কমান্ড ফলো করেছে, তাদের কোনো দোষ নেই। কিছু কর্মকর্তাদের কারণে এসব নিরীহ পুলিশ তাদের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশের এগারো দফা দাবি: এদিকে পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যদের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, পুলিশ কোনো সরকারের অধীনে কাজ করবে না, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে জনগণের সেবা করবে। পুলিশ কোনো এমপি-মন্ত্রীকে প্রোটোকল দেবে না, কোনো সিনিয়র অফিসারকে প্রোটোকল দেবে না। ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করা হবে না বলেও দাবি আসে। ঊর্ধ্বতনরা যেভাবে দ্রুত পদোন্নতি পায়, ঠিক সেইভাবে নিম্ন কর্মচারীকেও দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, পুলিশের ২০ দিন ছুটি বৃদ্ধি করে ৬০ দিন করা, অফিসারের মতো কনস্টেবলদের জন্য সোর্স মানি দেওয়া, পুলিশকে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টিও বিল নিশ্চিত করা, পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা এবং প্রত্যেক সদস্যদের নিজ রেঞ্জে বদলি করার দাবি করা হয়। এদিকে নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের’ প্যাডে নামহীনভাবে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব সৈনিককে অভিনন্দন জানাই দেশ থেকে স্বৈরাচার উৎখাত করার জন্য।’ শত শত পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি এগুলো কোনো ছাত্রদের কাজ নয়। নিঃসন্দেহে কোনো দুষ্কৃতকারীদের কাজ।’ ওই সংগঠনটির সভাপতি উত্তরা-পশ্চিম থানার ওসি বিএম ফরমান আলী এবং সাধারণ সম্পাদক গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের স্বাক্ষর ছিল না। দুই কর্মকর্তাই আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সংগঠনের প্যাডে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এদিকে দায়িত্বশীলরা অফিসে না এসে আত্মগোপনে থাকায় পুলিশের ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশে চেইন অব কমান্ড ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টায় রাজারবাগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। শহিদুর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অবস্থান করছি। ডিএমপির বিভিন্ন থানা এলাকায় সাধারণ পুলিশ সদস্য নিহত-আহত হয়েছেন, যাদের মরদেহ বিভিন্ন থানায় পড়ে রয়েছে আমরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করছি। অনেককে আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নিয়ে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মরদেহ সৎকার করে দাফনের জন্য নিজ নিজ ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। আমি আমার প্রিয় সহকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করব, বাংলাদেশের যে প্রান্তেই আপনারা থাকেন, ধীরে ধীরে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য। ইউনিট কমান্ডারদের অনুরোধ করব, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনারা যার যার কর্মস্থলে নিয়োজিত হওয়া অব্যাহত রাখবেন।’ কর্মবিরতির একটি গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু, জনগণের জন্যই কাজ করে। পুলিশ ছাড়া আমরা কোনো সমাজ চিন্তা করতে পারি না। সুতরাং আমাদের পুলিশ সদস্যদের আবারও আমি অনুরোধ করব, আপনারা এ সব গুজবে কান না দিয়ে আপনারা আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে আপনারা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করবেন।’ ডিএমপিতে কতজন নিখোঁজ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিএমপিতে আমরা এখন পর্যন্ত সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছি না। এটা নিয়ে আমরা এখনো ব্যস্ত আছি। পুলিশ জনগণের। জনগণের পাশেই থাকবে পুলিশ এটাই প্রত্যাশিত; কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ থাকার পর পুলিশ প্রথম আক্রান্তের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।’ পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি সদর দপ্তর, ‘ডিবি অফিসসহ পুলিশের বড় বড় স্থাপনা থানা অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। সেখানে আপনারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। আজ সারা দিনে আমাদের অনেক সদস্য নিরাপত্তার খাতিরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের আমরা নিরাপদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা পুলিশকে তা নিজস্ব কর্মে নিয়োজিত করার চেষ্টা করব। আমরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করছি, অনুরোধ করেছি একাধিকবার। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’