‘আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা, আমাকে ছেলের লাশ উপহার দিছে দেশ’

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৪৩, আগস্ট ০২ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমি সাড়ে ৮ বছর ধরে দেশের বাইরে থাকি ছেলে-মেয়ে মানুষ করার জন্য। আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা; আমাকের আজকে আমার ছেলের লাশ উপহার দিছে এই দেশ। আমার তো সব স্বপ্নই শেষ এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত জিসানের বাবা বাবুল সরদার। গত ২০শে জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায় বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যান জিসান। স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ৯ দিন পর আত্মহত্যা করেন জিসানের স্ত্রী রাবেয়া মিষ্টি। কদিনের ব্যবধানে তছনছ হয়ে যায় দুটি পরিবার। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে পরদিনই সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ছুটে আসেন বাবুল সরদার। জানান সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা। বাবুল সরদার বলেন, পুলিশ গিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করেছে। অনেক বাসায় গুলি লেগেছে, অনেক বাসার গ্লাস ভেঙে গেছে। সে সময় আমার ছেলেটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন আমার ছেলের কপালে গুলি লেগে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলেটারে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক চেষ্টা করছি বিদেশ নিয়ে যাইতে; কিন্তু ও যায় নাই। আজকে আমাকে যদি গুলি করে মেরে ফেলতো, আমার কোনো কষ্ট হইতো না। আমি মরে গেলে, আমার ছেলেটা সংসারের হাল ধরত। কালকে যদি আমার কিছু হয়ে যায়, আমার সংসার কে দেখবে? এই কয়েকদিনেই মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবারটি। এরইমধ্যে আরও একটি ঝড় বয়ে গেছে পরিবারটির ওপর। মাত্র ১৪ মাস আগে ভালোবেসে রাবেয়া মিষ্টিকে বিয়ে করেছিলেন জিসান। স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ৯ দিনের মাথায় আত্মহত্যা করেছেন তাঁর স্ত্রী। বাবুল সরদার বলেন, বাপের বাড়িতে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে আমার ছেলের বউ। দুই দুইটা ফ্যামিলি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ছেলের বউ-আমার ছেলে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বাবুল সরদার বলেন, আমার ছেলের একটা হাত যাইতো, একটা পা যাইতো, আমি ভিক্ষা করে খাওয়াতাম, রিকশা চালিয়ে খাওয়াতাম। কিন্তু আমার তো এখন করার কিছু নাই। জিসানের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, আঠারো বছর বয়সী আব্দুর রহমান জিসান দোকানে দোকানে পানি সরবরাহের কাজ করতেন। মা-স্ত্রী ও একমাত্র বোনকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায়। বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান জিসান।