মামলার আসামি মৃত ব্যক্তি, খুঁজে বেড়ায় পুলিশ!

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৫১, জুলাই ০৮ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক  : এক বছর আগে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে চট্টগ্রাম আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন এক আমেরিকা প্রবাসী। আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো। তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা । বাকি দুজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয় । কিন্তু যেই ১৪ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন আরো প্রায় সাড়ে তিন বছর আগেই। তার নাম মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন । মৃত্যুর প্রায় আড়াই বছর পর অন্য সবার সঙ্গে তাকেও অভিযুক্ত করে মামলাটি করেছিলেন সেই আমেরিকা প্রবাসী। একইভাবে তদন্ত প্রতিবেদনেও তাকে জীবিত হিসেবে অভিযুক্ত করে পিবিআই। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর তাকে ধরতে তৎপরতাও শুরু করে পুলিশ । কিন্তু কোথায় পাবে তাকে? তিনি তো মারা গেছেন আরো আগেই। ঘটনাটি জানাজানি হলে শাহজাহানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক (প্রশাসন) কাজী এনায়েত কবীর। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ মে মৃত শাহজাহানসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে নালিশি মামলাটি করেন আমেরিকা প্রবাসী বাবুল মিয়া। গত ৩০ বছর ধরে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাবুল মিয়ার সই জাল ও বিভিন্ন ডকুমেন্টসে তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাবুল মিয়ার নাম ব্যবহার ও সই জাল করে ‘সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি এবং একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন অভিযুক্তরা। এরপর কয়েকটি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি-ফ্ল্যাট বেচাকেনার নামে লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেন এবং প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।এ ধরনের ঘটনায় ফ্ল্যাট ক্রয়কারী এবং ঋণ দাতারা বাবুল মিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা করেন। এসব মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে জাল-জালিয়াতির মামলা করেন বাবুল মিয়া। মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে গত ২ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। এতে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া দুজনকে মামলার দায় থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শাহজাহান ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মারা যাওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর তাকে জীবিত হিসেবে অভিযুক্ত করে পিবিআই। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে গত ২০ মার্চ শাহজাহানকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, মামলায় উল্লিখিত ঘটনা চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পিবিআইয়ের কাছে পাঠায় আদালত। সেই ঘটনা তদন্তে বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে পিবিআইয়ের সততা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব থাকা জরুরি। এসবের তোয়াক্কা না করে তদন্ত পরিচালনা করলে সেটি দুঃখজনক বিষয়। তবে এখানে নালিশি মামলার বাদীও দায় এড়াতে পারেন না। মৃত শাহজাহানের ছেলে মোহাম্মদ শাহীন বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো আব্বা মারা গেছেন। মামলার আরজিতে এবং তদন্ত প্রতিবেদনে আব্বার নাম দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। এ নিয়ে সামাজিকভাবেও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়ায় তথ্য আদান-প্রদানে গ্যাপ থাকার কারণে প্রতিবেদনে মৃত ব্যক্তির নাম এসেছে। আদালতে নালিশি মামলা করার সময় বাদীর নজরেও বিষয়টি আসেনি। তবে পরবর্তীতে আমরা আইন অনুযায়ী পুনরায় সম্পূরক প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে মোহাম্মদ আরাফাত, একই গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে মোহাম্মদ মোমেন, মাস্টার শফিক উদ্দিনের ছেলে শিহাব উদ্দিন, মোহাম্মদ ইসার ছেলে মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব, ইয়াছিনের ছেলে মাহবুবুর রহমান, এএসএম সুফিয়ানের ছেলে এএসএম রফিকুল ইসলাম, এসএম সাইফুল ইসলাম, ইকরামুল কবিরের ছেলে মোহাররামুল কবির, গোপাল চন্দ্র রায়ের ছেলে পীযূষ চন্দ্র রায়, জাহিদুল ইসলামের মেয়ে সুরাইয়া বেগম, আবুল খায়েরের মেয়ে জেসমিন মান্নান, মোহাম্মদ শামসুল আলমের ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদ ও রবিউল আলমের ছেলে রাশেদ হোছাইন। যে দুজনকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয় তারা হলেন- মুছাপুর গ্রামের ইকবাল হোছাইন ও খন্দকার শামীম আহমেদ।