পিরোজপুরে ভাসমান সবজির বেড তৈরিতে ব্যস্ত কৃষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিলাঞ্চলে ভাসমান বেড তৈরিতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের পানির দেখা পেয়েই কৃষকদের এই কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, পদ্মডুবি, মনোহরপুর, দেউলবাড়ি, সোনাপুর, বিলডুমরিয়াসহ বিভিন্ন বিলে কৃষকের এ ব্যস্ততা দেখা গেছে।
ভাসমান বেডের ওপর উৎপাদিত সবজি নিয়েই বৈঠাকাটা ঐতিহ্যবাহী ভাসমান সবজির বাজার মেলে। সবজি চাষি মো: সেলিম ফকির জানান, কচুরিপানার ঘন, লম্বা ও পুরস্তরের ওপর একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বাঁশ ফেলে এ বেড তৈরি করা হয়। এরপর বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে দু’পাশ থেকে কচুরিপানা টেনে বাঁশের ওপর স্থরে স্থরে সাজাতে হয়।
কচুরিপানার স্থর সাজানোর সময় কচুরিপানা পানিতে যেভাবে থাকে সেভাবে ঘন করে অর্থাৎ খাড়া করে সাজাতে হবে। পরবর্তী অর্ধেক স্তর সজানোর সময় কচুরিপানা উল্টা করে সাজাতে হবে, অর্থাৎ এর শিকড় ওপরের দিকে থাকতে হবে।
তারপর পা দিয়ে চেপে চেপে উঁচু স্তর তৈরি করতে হবে যেন কোন ফাঁকা না থাকে। তিনি আরো জানান, এরপর স্তুপের ওপরে উঠে প্রয়োজনীয় কচুরিপানা তুলে মাপ অনুযায়ী ধাপ তৈরি করতে হবে। ধাপের ওপরের অংশে অপেক্ষাকৃত ছোট কচুরিপানা, খুদি পানা, টোপা পানা দেয়া ভালো। বন্যা, ঢেউ বা জোঁয়ার-ভাটার স্রোত থাকলে বেডের মাঝামাঝি জায়গায় বাঁশের খুঁটি বা বেডের চারপাশে ফ্রেম দিতে হবে।
কৃষক মো: নেয়ামাতুল্লাহ জানান, ভাসমান বেড তৈরির পর উপরিভাগ আবাদ উপযোগী হতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। বেড তৈরির পর তাতে সারি করে সরাসরি বীজ বোনা যায়। আবার বল বা বিড়ায় তৈরি করা চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে বেডে রোপণ করা যায়।
আদা, হলুদ, কচু প্রভূতি ফসল সরাসরি রোপণ করা যায়। চারা পাঁচ-ছয় ইঞ্চি হলে এবং শিকড়ের মাথা বল থেকে বের হলেই (কালো হওয়ার আগেই) বেডে লাগাতে হবে। বিড়া বা ব্যাগের চারা একত্রে বেডে নির্দিষ্ট পরিমাণ গর্ত করে রোপণ করতে হবে।
বিড়ার আকার ছোট হলে পাশে পঁচা কচুরির আস্তরণ দিতে হবে। নতুন আস্তরণের সাথে এক-দুই চা চামচ জৈব সার প্রয়োগ করলে চারা তাড়াতাড়ি বাড়বে। চারা লাগানোর পর সামান্য পানি দিয়ে চারা ও চারার গোড়া ভিজিয়ে দিতে হয়। চারা বেশি লম্বা হলে বাউনি দিতে হবে।
তিনি জানান, অধিক ফলন পাওয়ার জন্য ভাসমান বেডে ঢেঁড়শ, টমেটো, বেগুন, কলমিশাক ইত্যাদি ফসলের সাথে আন্ত-ফসল ও মিশ্র ফসল হিসেবে ঝিঙ্গে, লালশাক, পুঁইশাক, ধনিয়া, ডাঁটা চাষ করা যায়। নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুচ্ছে এশা বলেন, ‘নাজিরপুর উপজেলার বিলাঞ্চলে ভাসমান বেডে কৃষি সবজি উৎপাদনের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনকারী কৃষকদের আমার দফতর থেকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সবজি ও মশলা প্রদর্শনী দেয়া হয়।’