পটুয়াখালীতে শিক্ষকতার পাশাপাশি ছাদ বাগান করে সফল শামীম

আল-আমিন | ১৯:৪৫, জুন ২৫ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমানে সারাদেশে ফসিল জমি কমছে বাড়ছে বসতি। তাই অল্প জায়গায় অধিক ফল-ফসল উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে সরকারের নানা উদ্যেগ রয়েছে। তাই দেশের বিভিন্ন শহরে বড় বড় বিল্ডিংয়ের বাড়ির ছাদে বাগান করতে ঝুঁকেছন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। বেশিরভাগ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির বাগান দেখা যায়। যেসব বাগান দেখা যায়, তার বেশিরভাগ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোনো গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। এসব বাগান করে সফলতাও পাচ্ছেন অনেকে। শখ থেকে হয়ে উঠছে বাণিজ্যিক চিন্তাধারাও। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের সুবিদখালী বাজার এলাকায় এম. শামীম আহমেদ নাসিরের ভবনের ছাদে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা অরিজিনাল থাই ড্রাগন লাল, সাদা, হলুদ তিন প্রজাতির গাছ। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, বারোমাসি পেয়ারা ইত্যাদি এবং বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি শাক সবজি রয়েছে। তবে নানান জাতের ফল, ফুল ও সবজির বাগান দেখতে ওই ছাদে ভিড় করছেন অনেকে। তিনি পেশায় একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি উপজেলার ৩৫ নম্বর এন এস আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক এবং বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মির্জাগঞ্জ উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শামীম আহমেদ পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বাগান করার প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলায় বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই তিনি বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা রোপন করতেন। ছোটবেলার শখকে তিনি একটি মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা আশপাশ তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে দু’একটা গাছা লাগিয়ে বাগান করা শুরু করেন। নিজ বসতবাড়ির তিনতলা ভবনের ছাদকে এখন তিনি জীবন্ত বাগানে পরিণত করেছেন। ছাদের কোথাও তিনি থাই ড্রাগন, কমলা, আম্রপালি, হাঁড়িভাঁঙ্গা, মাল্টা, বেদানা, লিচু, লেবু, বারোমাসি আমড়া, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ লাগিয়েছেন। কোথাও আবার পেঁপে, বেগুন, শসা, লাল শাক, পালংশাক এবং মরিচা গাছ-সহ অনেক ধরনের সবজি গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়াও আবার কোথাও হাসনাহেনা, গোলাপ, জবা, গাঁধা, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। সবজি, ফল আর ফুলে ভরে গেছে ছাদের সমস্ত অংশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো ছাদ, নাকি সবুজ ফসলের মাঠ। সব ধরনের সবজি ও ফল কীটনাশক ব্যবহার না করেই এবং জৈবসার ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন আদর্শ শিক্ষক শামীম আহমেদ। উৎপাদিত সবজি ও ফল নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ফল ও সবজি আত্মীয় স্বজনের মাঝে বন্টন করেন বলেও তিনি জানান। শামীম আহমেদ শিক্ষকতা, ব্যবসা ও ছেলে-মেয়ের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যবহার করেন। শিক্ষক এম. শামীম আহমেদ নাসির জানান, ‘২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে ছুটি থাকায় ড্রাগন ফলের গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই বাগান করা আমার শখ। আমার বাড়ির সাথে তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে বাগান করা শুরু করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং স্কুল থেকে ফিরে বিকালে এক ঘণ্টাব্যাপী করে বাগানের পরিচর্যার কাজ করি। বর্তমানে আমার ছাদ বাগানে ১০০টি অরিজিনাল থাই ড্রাগন (লাল, সাদা ও হলুদ) এই তিন ধরনের গাছ রয়েছে এবং এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, বারোমাসি পেয়ারাসহ দুই শতাধিক গাছ রয়েছে ও বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি শাক সবজি রয়েছে।’ শামীম আরো বলেন, ‘শহরে ছাদ বাগানের কদর থাকলেও মফস্বল এলাকায় ছাদ বাগান তৈরী করার কেউ চিন্তাও করে না। কারণ এতে অনেক পরিশ্রম ও খরচও বেশি এবং তবে এখানে বাগান থাকেও নিরাপদ। কারণ এখানে গরু, ছাগল কিংবা মানুষের দ্বারা বাগানের ক্ষতি হওয়ার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ অবসর সময়টা বাগানের মধ্যেই কাটিয়ে দিই।’ তিনি আরো জানান, ‘সৌন্দর্য পিপাসু ব্যাক্তি অনেকে বাগান দেখতে ছাদে আসেন এবং তাদের আমি ছাদ বাগান করার পরামর্শ দেই। অনেকে আমার বাগান দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। তবে আমার মতো মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীতে আরো দু’জন ছাদ বাগান করে সফলতা পেয়েছেন।’ এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: আবদু্ল্লা আল-মামুন জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি শামীম আহমেদের ন্যায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ছাদে বাগান করার দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।’ উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে মির্জাগঞ্জে ছাদ বাগানের সংখ্যা বেড়েছে। কর্ম জীবনের পাশাপাশি ছাদ কৃষি করছেন অনেকে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটাতে সহযোগিতা করেন ছাদ কৃষি। এ সকল কাজে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে করে নিজে ও তার পরিবারসহ সমাজ উপকৃত হচ্ছে।