মারমুখী আন্দোলনে সক্ষম নেতাদের নিয়ে হবে বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি

আল-আমিন | ২১:৪২, জুন ২০ ২০২৪ মিনিট

মারমুখী আন্দোলনে সক্ষম নেতাদের নিয়ে হবে বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি। এমনই আভাস মিলেছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে। এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিক ব্যর্থতা কাটাতে চায় দল; যে ব্যর্থতা গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিরাজ করছে বরিশালে। বিগত সময়ে এখানে দলের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের কারণেই এই ব্যর্থতা বলে মনে করছেন সবাই। তাই তো এবার নেতা নির্বাচনে চলছে ব্যাপক যাচাই-বাছাই। আন্দোলন-সংগ্রামে কার কী ভূমিকা ছিল তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেই ভূমিকার ওপর ভর করেই হবে পদ-পদবি বণ্টন। যেখানে থাকতে পারে একাধিক চমক। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যে নয়া কমিটি ঘোষণা হতে পারে। গত ১৩ জুন মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। মনিরুজ্জামান ফারুক ছিলেন এর আহ্বায়ক। সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির। অনেকের মতে, আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণেই ভেঙে দেওয়া হওয়া ওই কমিটি। যদিও তা মানতে নারাজ সদ্য সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদ। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি সফলভাবে পালনের দাবি তার। বহু আগেই কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছিল উলে­খ করে তিনি বলেন, ‘৩ মাসের জন্য এই কমিটি করেছিল কেন্দ্র। ২৯ মাসেরও বেশি দায়িত্ব পালন করেছি আমরা। এ সময়ে গঠন করা হয়েছে ২৯টি ওয়ার্ড কমিটি। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বড় জনসভা হয়েছে বরিশালে। মিছিল-বিক্ষোভ কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিল না বরিশাল। তাছাড়া কেবল বরিশালই নয়, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কমিটিও তো বিলুপ্ত হয়েছে।’ মীর জাহিদের এই দাবির সঙ্গে অবশ্য একমত নন বিএনপির অনেক নেতা। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি এখানে পালিত হয়েছে সত্যি, তবে তা হয়েছে তখন যখন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছিল না। আন্দোলন দমাতে সরকার মারমুখী হওয়ার পর কাউকে দেখা যায়নি মাঠে। আহ্বায়ক ফারুক অবশ্য গ্রেফতার হয়ে ছিলেন জেলে। এছাড়া কমিটির বাকি নেতাদের বেশির ভাগই ছিলেন পলাতক। আন্দোলন তো দূর, মাঠের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত ছিল না তাদের। এর আগে এখানে নগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার। তার সময়েও ঘটে একই ঘটনা। সরোয়ারকে অবশ্য এখন নেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে।’ আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় সরোয়ার সমর্থকরা। প্রায় ৩ বছর ধরে দলে অনেকটাই কোণঠাসা তারা। ঠাঁই ছিল না সদ্য সাবেক আহ্বায়ক কমিটিতেও। ওয়ার্ড কমিটিগুলো থেকেও গণহারে বাদ দেওয়া হয় তাদের। কমিটি ভাঙার ঘোষণা আসার দিনই তারা বৈঠক করে জেলা বিএনপি অফিসে। ত্যাগী, পরীক্ষিত অথচ পদবঞ্চিতদের মূল্যায়নের দাবি জানানো হয় সেখানে। এই পক্ষের অন্যতম নেতা মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ‘আমরা চাই কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হোক কমিটি। তাতে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে। যোগ্য নেতারা আসবেন দায়িত্বে।’ ত্যাগী-পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন বিষয়ে একমত হলেও নেতা নির্বাচন প্রশ্নে ভিন্নমত বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নুর। এই মুহূর্তে আন্দোলন-সংগ্রামে শক্ত ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম এমন নেতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য তার। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি কারা সামলাতে পারবেন সেটাই দেখছে দল। সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলনে রাজপথে কাদের ভ‚মিকা বেশি তাও দেখা হচ্ছে।’ কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝুঁকি নিয়ে যারা রাজপথে থেকেছেন মূলত তাদের নিয়েই নতুন কমিটি করার চিন্তাভাবনা হাইকমান্ডের। এই তালিকায় এখন পর্যন্ত উঠেছে ৫ নেতার নাম। তারা হলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আলী হায়দার বাবুল ও মনিরুজ্জামান ফারুক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতা, নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য আফরোজা নাসরিন। এছাড়া আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চান, সদ্য সাবেক মহানগর কমিটির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিনসহ সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার ঘরানার কয়েকজন নেতা। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সম্ভাবনা এ মুহূর্তে নেই। কেননা দলের হাইকমান্ড ভালো করেই জানে যে, যখন যারা পদে থাকেন তারা নিজেদের লোকজনকে কাউন্সিলর বানিয়ে রাখেন ভোট সামলাতে। তাছাড়া টাকা ছড়িয়ে কাউন্সিলর কিনে নেতা হওয়ার রেকর্ডও আছে। তাই নেতা নির্বাচন প্রশ্নে আন্দোলনকালীন ভ‚মিকার যেসব রেকর্ড রয়েছে সেগুলোর প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে হাইকমান্ড।’ বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘সব তথ্যই আছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে। তাছাড়া এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা। আমাদের মহাসচিব তো স্পষ্ট করেই বলেছেন, যা করার আমাদেরই করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। সবকিছু বিবেচনায় মাঠের আন্দোলনে যারা সফলতা আনতে পারবেন তারাই আসবে নেতৃত্বে। এর বিকল্প দেখছি না। যা করার বুঝেশুনেই করবেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।’