বিশুদ্ধ পানির সংকট বরিশাল নগরীতে, ঘরে ঘরে হাহাকার

আল-আমিন | ১৫:৪৬, জুন ১২ ২০২৪ মিনিট

‘আল্লাহ আরও দুটি হাত দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো। চার হাতে কম করে হলেও ৬ থেকে ৭টি কলসি-বালতি পানিতে ভরে ঘরে নিয়ে আসতে পারতাম। সুস্থ থাকি আর না থাকি সংসারের প্রতিদিনের কাজের জন্য সকালে পানি আনতেই হয়।’— ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। নগরীর মতাসার এবং পুরানপাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দার অভিযোগ এই পানি সংকট নিয়েই। প্রতিদিন সকাল থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের শুরু হয় পানি সংগ্রহের সংগ্রাম। স্থানীয় মসজিদ কিংবা যে বাড়িতে টিউবওয়েলসহ পাম্প বসানো আছে সেখানে পানির জন্য ধরনা দিতে হয়।  তবে স্থানীয় মেয়র ও কাউন্সিলর পানি সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

মতাসার এবং পুরানপাড়ার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত মেয়র এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে কেটেছে ২২ বছর। এখনও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। পানি সংগ্রহের এই দৌড়ঝাঁপ কবে শেষ হবে জানেন না তারা।

পানি সংগ্রহের এই দৌড়ঝাঁপ কবে শেষ হবে জানেন না নগরীর মতাসার এবং পুরানপাড়ার বাসিন্দারামো. মোবাশ্বের বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরের নারী-পুরুষ সবাই গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সংগ্রহে নামেন। মসজিদে-মসজিদে এবং যে সকল বাড়িতে টিউবওয়েলসহ পাম্প বসানো আছে সেখানে যেতে হয় পানি আনতে। এতে নানা জনের নানা কথাও শুনতে হয়। কিন্তু সেই কথায় রাগ করলে পানি পাওয়া যাবে না। এ কারণে চুপচাপ থেকে পানি নিয়ে ঘরে আসতে হয়।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে দৈনন্দিন ঘর-গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পানি অন্য বাড়ি থেকে আনতে হচ্ছে হাসিনা বেগমকে। তিনি বলেন, আল্লাহ আর দুটি হাত বেশি দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো। কারণ চার হাতে কম করে হলেও ৬ থেকে ৭টি পানির পাত্র ভরে ঘরে নিয়ে আসতে পারতাম। সুস্থ থাকি আর না থাকি প্রতিদিন সকালে পানি আনতে অন্যের দুয়ারে যেতেই হয়।

নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রায় সবার ঘরেই পানি সংকট। তাদের অভাব-অভিযোগের বেশির ভাগজুড়েই আছে পানি সংকটের কথা। তারা জানান, এই এলাকা যখন ইউনিয়ন পরিষদে ছিল তখনও পানির কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক বছর ধরেই তারা পানির জন্য সরকারি বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার করে আসছে। কিন্তু সরকারিভাবে টিউবওয়েল বা পাইপলাইনের পানি কোনটাই আসেনি। এর মধ্যে একদিন খবর আসে এই এলাকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের অধীনে চলে গেছে। তখন সবাই ভেবেছিল, কষ্টের দিন বুঝি শেষ হলো। কিন্তু আশায় আশায় কেটেছে আরও ২০ বছর। পানি আর আসেনি।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কাউন্সিলর পানি সংকটের বিষয়টি অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার সড়ক-ড্রেন এবং পানির লাইনের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করতে। তিনি আরও বলেন, যে এলাকায় সড়ক হবে সেই এলাকায় একই সঙ্গে পানির লাইন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এতে করে বারবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির প্রয়োজন হবে না। জনগণও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।