বরিশাল বিসিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য তৈরি করছে নাফিস বেকারি!

আল-আমিন | ১৪:৩০, জুন ০৬ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : কাপড় ও কাঠের রং, কিন্তু তা ব্যবহার করা হচ্ছে বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, মিষ্টিসহ নানা রকমের খাবার তৈরিতে। বেকারি পণ্যের নামে আসলে আমরা কী খাচ্ছি? বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীর বেশিরভাগ বেকারি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণেও রয়েছে চরম অব্যস্থাপনা। এছাড়াও পণ্য রাখার ঘর যেমন অপরিষ্কার। পোকামাকড়েও ভরপুর। সর্বোপরি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স। থাকলে মান বজায় রেখে উৎপাদন করা হচ্ছে না। অনুমোদন ছাড়াই বেকারি পণ্যের উৎপাদন এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে মানব স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন হুমকির মুখে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ বেকারির নেই ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, স্যানিটারি ও ট্রেডমার্ক ছাড়পত্র। ফলে তদারকির অভাবে উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে বেকারি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এসব খাদ্য মানবদেহের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সরকারি অনুমতি ছাড়াই মানহীন পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করছে নাফিস বেকারি। এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে বিস্কুট, কেক, পাউরুটিসহ নানা মুখরোচক পণ্য। স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারিসামগ্রী। বেকারিতে ব্যবহৃত জিনিসগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। শ্রমিকরা খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। এ সময় তাদের গা থেকে ঘাম ঝরে পণ্যের ওপর পড়তে দেখা গেছে। আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করার কড়াইগুলোও অপরিষ্কার ও নোংরা। ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ভন ভন করছে মাছির ঝাঁক। অপরিচ্ছন্ন হাতেই প্যাকেট করা হচ্ছে এসব পণ্য। বাহারি মোড়কে বিভিন্ন ধরনের বেকারিসামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে। শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছে ভারী কাজ। এমনকি বেকারিতে সাইনবোর্ড না লাগিয়ে নিজেদের আড়ালে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেকারির মালিক ফয়েজ হাওলাদার। বেকারির মালিক ফয়েজ হাওলাদারের কাছে বেকারি চালানোর সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আগে ছিল এখন নেই। বিসিকের প্লট ক্রয় করার পর কাগজপত্র এখনো আমার নামে হয়নি। তাই অনুমোদন দেয়নি। এতোদিন কি আমি আমার ব্যবসা বন্ধ রাখবো। তবে বিএসটিআই’র ছাড়পত্র আছে। অনিয়মের কথা স্বীকার করে বেকারি ফয়েজ হাওলাদার জানান, বেকারিটি নতুন হওয়ায় কিছুটা অপরিষ্কার। ভবিষ্যতে বেকারির পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন বলে জানান। না প্রকাশে অনিচ্ছুক বেকারির এক কর্মচারী বলেন, আমাদের মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। সে যেমন পরিবেশ তৈরী করেছে তেমন পরিবেশে কাজ করতে হয়। সারাদিন কাজ করে পরের দিন সকালে ভ্যানগাড়ি করে দোকানগুলোতে সাপ্লাই করা হয়। বেকারির পণ্য কিনে ভুক্তভোগী শফিক বলেন, বেকারি থেকে বাচ্চাদের জন্য এক প্যাকেট কেক নিয়েছিলাম। বাসায় গিয়ে দেখি বেশিরভাগ কেক নষ্ট ও পচা। বাচ্চারা বলছে দুর্গন্ধ। বেকারিতে কেকগুলো নিয়ে গেলে প্রথমে তারা পাল্টে দিতে চায়নি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক সুৃমি রাণী মিত্র বলেন, ভেজাল খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরও কোথাও অনিয়ম হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’’ এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম জানান, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো বেকারি পণ্য উৎপাদন বা বাজারজাত করতে পারবে না। এসব বেকারির বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’