আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি, প্রকৌশলীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা

আল-আমিন | ১৬:২০, জুন ০১ ২০২৪ মিনিট

ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও টানা চারদিন ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। আর এতেই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে রিজেইন দিয়ে চলে যাবেন।’ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে ঝালকাঠি ওজোপাডিকো অফিসে এ ঘটনা ঘটে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি স্থানে ৩৩ হাজার কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। জেলা শহরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বুধবার (২৯ মে) সকালে রাজাপুর উপজেলা শহর এবং রাতে ঝালকাঠি শহর ও নলছিটি শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও ৯৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার এক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শফিকুল আলমসহ (৭০) ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার। এছাড়াও কাঁঠালিয়া উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। শুধু মেইন লাইনে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। তবে এখনো ৮০ ভাগ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন। এ কারণে ঝালকাঠি ওজোপাডিকো অফিসে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন খন্দকার শফিকুল আলম। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করে শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার দায়িত্বরত ওজোপাডিকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) মো. আব্দুস সালামকে বলেন, ‘আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে রিজেইন দিয়ে চলে যাবেন।’ এভাবে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়েন এ মুক্তিযোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধার খন্দকার শফিকুল আলম প্রকৌশলীর কাছে জানতে চান, রিমালের চার দিন পার হলেও এখনও কেন তিনি বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি? প্রকৌশলীকে বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব কী ঘুষ খাওয়া? ঘুষ খাওয়ার জন্য কী দেশ স্বাধীন করেছি?’ বলার পরে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে প্রকৌশলীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অফিস থেকে চলে যান মুক্তিযোদ্ধা। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার খন্দকার শফিকুল আলম বলেন, গত ২৬ মে থেকে একটানা চার দিন অতিবাহিত হলেও আমি বিদ্যুৎ পাইনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শহরের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ পেয়েছে তাহলে আমি কেন পেলাম না। আমি বৃদ্ধ মানুষ এই গরমে কী বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা যায়। তারপর আবার পানিরও সংকট কেননা বিদ্যুৎ লাইন না থাকলে পানি আসবে কেমনে। পানির জন্য তীব্র গরমে গোসল, খাবার পানি, বাথরুমের পরিচ্ছন্নতার কাজে অনেক কষ্ট করতে হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে থাকায় ৯৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত এ মুক্তিযোদ্ধা। বিদ্যুৎ লাইন না পাওয়ায় তীব্র গরমে কষ্টে দিন কাটছে তার। এতে তিনিসহ বিদ্যুৎবঞ্চিত আশপাশের এলাকার বাসিন্দারাও পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। বিদ্যুতের অভাবে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। জেলা শহরের বাসিন্দারা রান্নাবান্না ও গৃহস্থালির কাজে পৌর কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের অবস্থা দুর্বিষহ। এ বিষয়ে ঝালকাঠি ওজোপাডিকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) মো. আব্দুস সালাম বলেন, ঝড়ে ঝালকাঠি শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে গেছে। যার জন্য বিদ্যুৎ অফিসের লোকসহ স্থানীয় শ্রমিক ভাড়ায় এনে কাজ করাচ্ছি তারপরও সব স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন যাদের বিদ্যুৎ লাইন সচল করে দিতে পারব তারা ভালো বলবে, ধন্যবাদ জানাবে। আর যাদের দিতে পারবো না তারা খারাপ বলবে। যেহেতু এ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করি সেহেতু এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। দুই তিন দিনের মধ্যে শহরের সব স্থানেই বিদ্যুৎ সংযোগ চালু দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলার ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মেরামতের জন্য দিনরাত বিদ্যুৎ অফিসের লোকসহ ভাড়া করা লোক দিয়েও কাজ করানো হচ্ছে। এত পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে যা খুব দ্রুত সম্পূর্ণ করা সম্ভব না, সময় লাগবে। আমরা শাখা করছি খুব তাড়াতাড়ি জেলার সব স্থানে বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে পারব।