যাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না

আল-আমিন | ২২:২৩, এপ্রিল ২৮ ২০২৪ মিনিট

দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে শ্রমিকদের দিয়ে চলছে বরিশালে খাওয়ার স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। কাজ থাকলে বেতন আছে, কাজ না থাকলে বেতন নেই—ভিত্তিতে কর্মরত ১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন যাচ্ছে ৯ জেলার সরকারি হাসপাতালে। এমনকি দুর্যোগকালীন ওসব শ্রমিক বড় ধরনের ভূমিকা পালন করলেও বছরের পর বছর চাকরি নিয়মিতকরণ নিয়ে ঝুলে আছেন। যাদের স্যালাইনে বাঁচে লাখো মানুষের প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না বছরের পর বছর। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজার দরের সঙ্গে চলতে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা, বাড়ছে ধারদেনার বোঝা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর পেনশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারণে পদশূন্য হলে সেখানে আর জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ম্যানেজার থেকে শুরু করে কেমিস্ট, দক্ষ কর্মী, মেশিন অপারেটর, ল্যাব সহকারী, উৎপাদনকর্মী ও মিক্সিং ওয়ার্কারসহ ৭০ পদের ৩৭টি পূরণ হয়নি। এমনকি আবেদন-নিবেদনেও সাড়া মেলেনি। ফলে ১৬ শ্রমিককে বাড়তি কাজ করতে হয়।

বিভাগীয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভাগের ছয় জেলা এবং গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সরবরাহ করা হয় বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ২১ হাজার ১০০ প্যাকেট উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে মজুত আছে সাড়ে চার লাখ প্যাকেট। দুর্যোগকালীন এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। বছরের পর বছর কেমিস্টের পদটি, দক্ষ কর্মীর ১০টি, ল্যাব সহকারীর একটি, উৎপাদন কর্মীর ২০টির মধ্যে ১৬টি, মিক্সিং ওয়ার্কারের তিনটির মধ্যে দুটিসহ ১৭টি পদের বিপরীতে ৩৭টি শূন্য পড়ে আছে।’

প্রতিষ্ঠানটি সচল রেখেছেন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজে থাকা শ্রমিকরা জানিয়ে সুপারভাইজার আরও বলেন, ‘তাদের দিনে ৬০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। তা দিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর। এরপরও চাকরি নিয়মিতকরণের আশায় বছরের পর বছর কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত বাজার দর বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ চাকরি নিয়মিত হলে এর চেয়ে বেশি উৎপাদনে যাওয়া যেতো। তারা কাজ করতে চান, বাজার দর অনুযায়ী বেতন চান। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আমলে নিলে উৎপাদন আরও বেশি হতো।’

খাওয়ার স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি সচল রেখেছেন মজুরিভিত্তিক ১৬ শ্রমিক। এখান থেকে একজন পেনশনে গেলে ওই পদ আর পূরণ হয় না। বছরের পর বছর ম্যানেজারের পদ শূন্য। নতুন কাউকে পদায়ন না করে বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্বে রাখা হয়েছে। এভাবে বহু পদ শূন্য থাকায় কাজে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি দক্ষ এবং উৎপাদনকর্মীর পদে নিয়োগ দেওয়া। যারা মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন তাদের নিয়মিত করলে সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।’

প্রতিষ্ঠান থেকে বিভাগের ছয় জেলা এবং ঢাকা বিভাগের তিন জেলার সরকারি হাসপাতালে ২৮ বছর ধরে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে উৎপাদন হয়েছে ৪২ লাখ ৭৬ হাজার। সরবরাহ হয়েছে ৪০ লাখ এবং মজুত আছে ছয় লাখ ১৬ হাজার প্যাকেট। ২০২২ সালে উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ প্যাকেট, ২০২১ সালে উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ছয় হাজার ২০০, ২০২০ সালে ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ এবং ২০১৯ সালে উৎপাদন হয়েছে ৪৭ লাখ ৪১ হাজার ৫০ প্যাকেট।’

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি ছোট ভবনে চলছে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। ছোট পরিসরে হওয়ায় স্যালাইন উৎপাদনে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হয় শ্রমিকদের। এ কারণে নিজস্ব ভবনেরও দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা।