বরিশালে ঘরে মাটিচাপা অবস্থায় মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশালের বাকেরগঞ্জে বসতঘরে মাটিচাপা অবস্থায় এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়। ষাটোর্ধ্ব পারভীন বেগম বাকেরগঞ্জ উপজেলার মধ্য কাটাদিয়া এলাকার মৃত জয়নাল গাজীর স্ত্রী। স্বজনদের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যা করা হয়েছে বৃদ্ধাকে।
এ ঘটনায় পারভীনের পরিবারের সদস্যসহ কেউই সন্দেহের বাইরে নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছে পুলিশ। তারা বলছে, তদন্তে প্রকৃত ঘটনা ও দোষীদের পরিচয় বেরিয়ে আসবে। স্বজনরা জানান, গত পাঁচ মাস ধরে কোনো খোঁজ ছিল না পারভীন বেগমের। তিনি কোনো স্বজনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন এমন ‘ধারণা’ করে কেউ খোঁজও নেয়নি তার।
পারভীন বেগমের ছেলে রাসেল বলেন, সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসে পারভীন বেগমকে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করে আমার স্ত্রী। পরে ঘরের ভেতরের মাটি দেখে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয় তারা। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করলে তা শনাক্ত করা হয়। রাসেলের দাবি, গত ৫ মাস আগে শত্রুতার জেরে স্থানীয় লাল চান বৃদ্ধা পারভীনকে হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে লাল চান বলেন, পারভীন বেগমের বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে পাঁচ বছর আগে। ছোট ছেলে রাসেল দুইটি হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর দুই বছর ধরে এলাকাছাড়া। হঠাৎ এলাকায় এসে আমার ওপর কেন রাসেল দোষ চাপাচ্ছে আমি জানি না।
আমার সঙ্গে রাসেল বা তার মায়ের কোনো শত্রুতা নেই। কয়েক বছর আগে আমার আর রাসেলের মাঝে কিছু দ্বন্দ্ব ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা সবাই ভুলে গেছে। কিন্তু এখন এসে রাসেল কী কারণে আমার ওপর এই দোষ চাপাচ্ছে তা আমি জানি না।
গ্রামপুলিশের সদস্য শাহ আলম বলেন, বৃদ্ধা পারভীনের কোনো শত্রু ছিল না। উনি একাই এই বাড়িতে থাকতেন। খবর পেয়ে আমরা সবাই ছুটে এসেছি। বৃদ্ধা মানুষকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করলো কারা, এটাই এখন বের করার বিষয়। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
তার মতো একই কথা স্থানীয়দের। তারা বলছেন, পারভীনের ভাঙাচোরা টিনের ঘরে এলোমেলো হয়েছিল জামাকাপড়সহ আসবাবপত্র। আর সেই ঘরের মধ্যেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয় ষাটোর্ধ্ব ওই নারীকে। এমন নির্মমতা কারও বিশ্বাস হওয়ার নয়। যে শুনছেন সেই অবাক হচ্ছেন, কারণ এই নারীর সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল বলে স্থানীয়দের জানা নেই।
বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (সার্কেল এসপি বাকেরগঞ্জ) মো. ফরহাদ সরদার জানান, সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ অবস্থায় সন্দেহের বাইরে কেউ নয়। তদন্তে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত ঘটনা যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীরাও বেরিয়ে আসবে। পারভীন বেগমের স্বামী কৃষক জয়নাল গাজী ২০০৭ সালে মারা যান। এরপর থেকে তিনি একাই স্বামীর বাড়িতে থাকতেন।