কাউনিয়া থানায় ঘুষ দিলেই মামলা গায়েব, না দিলেই চলে নির্যাতন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাধারণ মানুষকে থানায় ধরে এনে নির্যাতন ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে একের পর এক মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানা পুলিশ। মনের মত ঘুষ দিলেই মামলা গায়েব করেন তারা, আর না দিতে পারলেই চালানো হয় নির্যাতন। এমনকি ঘুষ নিয়ে প্রতিপক্ষের উপরে মধ্যযূগীয় কায়দায় চালানো হয় বর্বর নির্যাতন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় নগরীর ৩নং ওয়ার্ডস্থ পুড়ানপারা এলাকার মৃধা বাড়ির বাসিন্দা মিরাজুল ইসলাম মৃধাকে তার নিজ বসত বাড়ি থেকে থানায় ধরে নিয়ে আসেন এসআই ইব্রাহিম। সে সময় মিরাজুল মৃধা তাকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে তাকে মারধর করে ধাক্কা দিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের মধ্যে ফেলে দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন তিনি। এমনকি সে সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক নারীদের সাথে অসদাচরন করেন এসআই ইব্রাহিম। পরবর্তীতে থানায় নিয়ে আসার পরে মিরাজুল মৃধাকে জানানো হয় দুই থেকে তিন দিন পূর্বে একই এলাকার বাসিন্দা জনৈক রাসেল মুন্সি নামক ব্যাক্তির কাছ থেকে তিনি যে ইট ক্রয় করেছেন সেগুলো চোরাই। এ ঘটনা শোনামাত্র মিরাজুল মৃধাসহ তার স্বজনরা থানার ভিতরেই পূর্বে গ্রেফতার হওয়া রাসেল মুন্সির উপরে কিছুটা চড়াও হয়ে চোরাই মালামাল তাকে গছিয়ে দেয়ার কারণ জানার চেষ্টা করেন। আর তাতেই পূর্বে ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা এসআই ইব্রাহিম তাৎক্ষনিক মিরাজুল মৃধার আরও ২ স্বজনকে গালাগাল করে লকআপে পুড়ে রাখেন। এতো কিছুর পরেও গভীর রাতে হঠাৎ করে মামলা গায়েব করে দেয় কাউনিয়া থানা পুলিশ। একে একে ছেড়ে দেয় চুরি মামলায় আটক হওয়া সকল আসামিদের।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ২৭ মার্চ দুপুরে। পূর্ব শত্রুতার জেরে নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের হোসনাবাদ ময়লাখোলা এলাকার বাসিন্দা রাশেদ শেখের বাড়ি তৈরির জন্য আনা ২ হাজার ইট জোড়পূর্বক ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যায় একই ওয়ার্ডের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মেহেদি হাসান শোয়েব ও পুড়ানপাড়া এলাকার রাসেল মুন্সি। সেই ঘটনায় থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন ভুক্তভোগী রাশেদ শেখ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে রাসেল মুন্সি এবং রাসেল মুন্সির দেয়া তথ্যের উপরে ভিত্তি করে মিরাজুল মৃধাকে গ্রেফতার করেন এসআই ইব্রাহিম। পরবর্তীতে উৎকোচ গ্রহণ করে মামলা না নিয়ে সকল আসামি ছেড়ে দেয় থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মিরাজুল মৃধা জানান, আমি নির্দোষ ছিলাম। আমি একজন সাবেক সেনা সদস্য। রাসেল আমার প্রতিবেশী। সে আমাকে বলেছিলো তার কিছু ইট আছে যা সে বিক্রি করবে। আর আমি ইট ব্যবসায়ী হওয়ায় সরল মনে ২ হাজার ইট ক্রয় করেছিলাম। কিন্তু সেই ইট যে চোরাই হতে পারে তা আমার মাথায় আসেনি। এসআই ইব্রাহিম আমার সাথে জঘন্য খারাপ আচরন করেছে। আমাকে কিল ঘুষি মারতে মারতে পানিতে ফেলে দিয়েছে। আমি পুকুর থেকে উঠার সময় বুট জুতা দিয়ে আমার পিঠে লাথি দিয়ে আমাকে জখম করেছে। এমনকি সে আমার মেয়েদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। শেষ মেষ সম্মান বাঁচাতে আমার বড় ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর মৃধার সহোযোগিতায় ৩০ হাজার টাকা নগদ এবং ১০ হাজার টাকা বিকাশে ওসিকে দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এসেছি।
এ বিষয়ে মামলার ২ নং আসামী রাসেল মুন্সি প্রতিবেদককে জানান, ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। মিরাজুল কাকা নির্দোষ। ইট সে কিনেছে ঠিকই কিন্তু তাকে আমি ভুয়া রশিদ দেখিয়ে ইট বিক্রি করেছিলাম।
এ বিষয়ে মামলার বাদী রাশেদ শেখ জানান, আমার বাড়ি তৈরি করার সময় চাঁদা দাবি করেন শোয়েব আর রাসেলসহ কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কিন্তু আমি চাঁদা দিতে না পারায় তারা আমার মালামাল ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে মিরাজুল মৃধার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ভাবে মিটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করাই। পরবর্তীতে তারা আমাকে জানান- আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এসআই ইব্রাহিম স্যার আমাকে থানায় ডেকে এনে বলেন- তোমার মালামাল উদ্ধার করে দেবো। এজাহার দায়ের করাবে নাকি মালামাল ফেরত নিবে অপশন তোমার দুইটা। তবে মালামাল নিয়ে চেপে যাও এরা এলকার প্রভাবশালী লোক। পরবর্তীতে কিছু হলে আমি তার দায় নেবোনা। পরবর্তীতে ইব্রাহিম স্যারের কথা মত আমি মালামাল ফেরত পাওয়ায় মামলার ঝামেলায় যাইনি।
এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মিরাজুল মৃধার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান- কোন মামলা না হওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এস আই ইব্রাহিমের সাথে সরাসরি কথা বললে তিনি বলেন- ভাই সামান্য বিষয় নিয়ে এত কিছু করার কি দরকার। ওনারা অপরাধ করেছে তাই চোরাই মালামাল উদ্ধারের স্বার্থে একটু শাসিয়েছি। আর ভাই আমি নিজ থেকে কিছুই করিনা। সব কিছু ওসি স্যারের নলেজে থাকে।
অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোঃ ফারুক হোসেন বলেন- এ রকম ঘটনা আমার জানা নেই। যদি এমন কিছু ঘটে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন- বিষয়টি দুঃখজনক। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সকল ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিভাবক কমিশনার জিহাদুল কবির মহোদয়ের নিকটে আকুল আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা।