শেবাচিমে চিকিৎসায় অবহেলা: প্রতিবাদ করায় স্কুলছাত্রকে পাঠানো হলো কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনকে মারধর এবং পরে মামলা দিয়ে পুলিশে দেওয়া এখন নিয়মিত ঘটনা। এবার জিহাদ হাওলাদার (১৪) নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন শেবাচিমের চিকিৎসকরা।
গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। জিহাদের নানা শাহাজাহান রাঢ়ী (৭০) স্ট্রোক করার পর মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর সোমবার রাতেই তাঁকে রাজধানীর নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বরিশাল কোতোয়ালি থানা জানায়, চিকিৎসকদের মারধরের অভিযোগে জিহাদ ও তার খালু মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শেবাচিমের ডা. তারিকুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে জিহাদকে আটক করা হয়। জাহাঙ্গীর পলাতক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখা যায়, আদালতে নিতে অন্য আসামিদের সঙ্গে জিহাদকে পিকআপে তোলা হচ্ছে। কী করবে বুঝতে না পেরে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে সে। তার মাসহ স্বজনরা ছোটাছুটি করছেন থানার এ-দরজা ও-দরজায়। তাদের চোখেমুখে উদ্বেগ-হতাশার ছাপ। কিছুক্ষণ পর পিকআপ চলতে শুরু করলে পেছন পেছন রিকশা নিয়ে ছোটেন স্বজনরা।
পুলিশ পিকআপে থাকার সময়ে জিহাদ জানায়, তার নানার অবস্থা খারাপ ছিল। সকালে ভর্তি করার পর বিকেল পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছে। পরে তাকে মারধর করে চিকিৎসকরা পুলিশের কাছে দিয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম বলেন, রোগীর অবস্থা দেখে হয়তো স্বজনের মাথা গরম হয়েছিল। তখন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। জিহাদকে সুনির্দিষ্ট করে আসামি করায় তাকে কিশোর আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাসপাতালে প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছিল তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
জিহাদের এক খালা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিশোর ছেলেকে আসামি না করতে সোমবার রাতে ঘটনার পর থানার দ্বিতীয় তলায় ডা. তারিকুলের পায়ে ধরে মাফ চেয়েছিলাম। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ডা. তারিকুল ইসলাম বলেন, থানায় মামলা করেছেন। মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত আছেন। হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পর গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলবেন। একজন কিশোরকে আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জবাব না দিয়ে কল কেটে দেন।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, উজিরপুর থেকে স্ট্রোকের এক মুমূর্ষু রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই রোগীকে চিকিৎসক দেখার সময় এক স্বজন ভিডিও করায় তর্কাতর্কি হয়। উত্তেজনার এক পর্যায়ে দু’পক্ষে হাতাহাতি হয়। রোগীর স্বজন মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তরিকুলকে মারধর করেছেন। ওই মুহূর্তে যাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে, তাকেই পুলিশে দেওয়া হয়েছে। সে কিশোর কিনা তা পুলিশ এবং আদালত বুঝবেন।
বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ জানান, আদালত জিহাদকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তবে বরিশালে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র না থাকায় এক দিন তাকে বরিশাল কারাগারে থাকতে হবে। পরদিন যশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়।