বরিশাল-ঢাকা নৌপথে ড্রেজিং করেও মেটানো যাচ্ছে না নাব্যতা সংকট
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল-ঢাকা যাতায়াতে নিরাপদ রুট হিসেবে এখনও নৌপথকে বেছে নেন অনেক যাত্রী। আর সেই নৌপথ ধীরে ধীরে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। বছর বছর ড্রেজিং করেও নৌপথে নাব্যতা সংকট মেটানো যাচ্ছে না। শুকনো মৌসুমের শুরুতেই বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চরম নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
লঞ্চ মাস্টাররা কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা স্বত্ত্বেও নদীর মাটি কেটে নদীতে ফেলায় প্রতিবছরই একই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারণা তাদের। অবশ্য বিআইডব্লিউটিএ বলছে ভিন্ন কথা।
বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের মেঘনা ও গজারিয়া নদীর দুই জায়গায় ভাটার সময় পানি তলানিতে যাচ্ছে। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের বাগরজা থেকে বামনীর চরের গজারিয়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ। এছাড়া চাঁদপুরের হিজলা থেকে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত মেঘনার শাখায় দুই কিলোমিটার পথ। নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়ছে এই নৌ রুট। প্রায়ই ডুবোচরে নৌ-যান আটকে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। ভাটায় সাধারণত পানির গভীরতা ৩-৪ ফুটে নেমে আসে। যদিও লঞ্চ চলাচলে গভীরতা দরকার কমপক্ষে ৫ ফুট এবং মালবাহী জাহাজের জন্য ৭ ফুট। এখানে জোয়ারের সময় নৌযান চলতে পারলেও ভাটায় লঞ্চ চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
এম ভি শুভরাজ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার আবুল কালাম বলেন, হিজলা, উলানিয়া কালিগঞ্জ প্রিমিয়ার-৫ মালবাহী জাহাজ ডোবার কারণে এবং তার উপরের দিকে তিন চার জায়গাতে ড্রেজিং না করলে যাত্রীবাহি লঞ্চ চালানো কঠি হয়ে পড়বে। বর্তমানে জোয়ার ভাটার সময় গুনে কোন মতে চলাচল করার কথা জানান তিনি।
সুরভী-৭ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার শুক্কুর আলী বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচলে ৮ থকে ১০ ফুট গভীর পানি প্রয়োজন হয়। সেখানে কোন কোন জায়েগাতে ৩-৪ফুট থাকে। যাতে তলানীতে ঠেকে যায় লঞ্চ। স্থায়ী সমাধান সব সময় চাই কারণ জাহাজ (লঞ্চ) নিয়ে চলাচল করি। আমাদের যাত্রীবাহী লঞ্চে পরানটা হাতের উপরে থাকে। যেকোনো সময় পানি কম পেলে অন্য জাহাজের (লঞ্চের) সাথে লেগে বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লঞ্চের তলায় পানি কম পেলে একদিকে দৌড় দেয় তখন কিছু করার থাকে না। এ কারণে জাহাজ ডুবে যায়।
তিনি বলেন, প্রতবিছরই নদীর মাটি কাটে কিন্তু তা আবার নদীতে ফেলায় পুনরায় ভরে যায়। আর যখন মাটি কাটে আমাদের কথা শোনে না যাতে কাজের কাজ কিছু হয় না।
এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ড্রেজিং করা হয়। দেখা যায় দুই চার মাস ভালো থাকে আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই ইতোমধ্যেই আমাদের লঞ্চ ডুবোচরে বেজে যায়। ভাটার সময় আমাদের কোন লঞ্চ চলতে পারে না। প্রায় দেড় ২ ঘণ্টা লঞ্চ বসিয়ে রাখতে হয়।
তিনি আরও বলেন, বরিশালে ড্রেজার বেইজ, বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে নাব্যতা সংকটের কথা জানিয়ে দ্রুত খননের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে বরিশাল ড্রেজার বেইজ, বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রীক) মো. আবদুর রাজ্জাক মিয়া বলেন, বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতি থেকে নাব্যতা দূরকরণে পত্র দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যাত্রীবাহি লঞ্চ, মালবাহী জাহাজ চলাচল করে। যে যে পয়েন্টে ডুবোচর আছে সেটি রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পে খনন করা হবে। কারণ এই রুট দিয়ে নদীপথে তাদের মালামাল যাতায়াত করে সেজন্য নদীপথ সচল রাখতে তাদের মালামাল নির্বিঘ্নে পরিবহন করতে ড্রেজিং করবে। এটি তাদের এই প্রকল্পে দেয়া আছে।
শুষ্ক মৌসুমে বরিশাল-ঢাকা নৌরুট সচল রাখতে প্রতি বছরই বিভিন্ন স্থানে খনন কাজ করে থাকে ড্রেজার বেইজ, বিআইডব্লিউটিএ। তবে এমন ড্রেজিং নিয়ে নৌযান শ্রমিক ও মালিকদের মতের ভিন্নতা রয়েছে। এভাবে বছর বছর অস্থায়ীভাবে খনন কাজ না করে নৌপথে পরিকল্পিতভাবে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী খনন করার দাবি জানান তারা।