ভোলায় নদীর পাড় কাটার মহোৎসব : ইটভাটায় যাচ্ছে মাটি

আল-আমিন | ২১:০৭, মার্চ ০৮ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোলার মেঘনা নদীর পাড় সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণসহ ভাঙন রোধে হাজারো কোটি টাকার কাজ চলমান। অপর দিকে চলছে নদীর পাড় কাটার মহোৎসব। নদীর পাড় ও বন বিভাগের সেই মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ দেখছি, ব্যবস্থা নিব আর চিঠি দিচ্ছি বলেই দায় সারছে। তাই হুমকির মুখে সহস্রাধিক কোটি টাকার প্রজেক্ট। এসব তথ্য এবং ভিডিও চিত্র সংগ্রহের জন্য গেলেই অবৈধ ইটভাটার মালিক পক্ষের লোকজন প্রতিবেদককে বিভিন্ন হুমকি দেয়। এই দ্বীপ জেলা ভোলা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত। চার পাশেই নদী বলে এখানে নদী ভাঙন খুব বেশি। বর্তমানে জেলার তজুমদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ভাঙন অনেকটা বেশি। বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এই তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও নদীর ভাঙন রোধে মির্জাকালু রেগুলেটর হতে চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলমান। এর মধ্যে রয়েছে ৩৩ দশমিক ১১০ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ। প্রায় ৫২ কিলোমিটার এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য একনেকে পাস হয়েছে পৃথক ভাবে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার কাজ, যা চলমান রয়েছে। সাতটি স্লুইজগেট রয়েছে এই প্রজেক্টের মধ্যে। সবকিছু মিলেই দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উন্নয়ন কাজে বাঁধ সেধেছে নদীর পাড়ের বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা। সরেজিমন গিয়ে দেখা যায়, জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচরা ইউনিয়নের কাটাখালী স্লুইজগেট সংলগ্ন দক্ষিণ চাচরায় একেবারে নদীর পাড়ে ‘৫০৫’ ইটভাটা। এই ইটভাটার মালিকর ভেকু দিয়ে নদীর পাড় কাটছেন প্রকাশ্যেই। ইট বানাচ্ছে এসব মাটি দিয়েই। ওই ইটভাটায় গিয়ে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আসে আবার চলে যায়। তারা কিছুই বলে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের লোক আসে আবার চলে যায় কিছু বলে না। তাদের ম্যানেজ করেই কাটা হচ্ছেনদী পাড়ের মাটি। ৫০৫ ইটভাটার মালিক চাচরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, ‘মাটি কাটছি, না কাটলে ইট তৈরির মাটি পাব কোথায়? প্রয়োজন হলে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে ভরাট করে দিব।’ একই অবস্থা লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ফাতেমাবাদ রওনক ইটভাটার। একই ভাবে তারাও নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে। তারা কার কথা শুনছে না। সবই যেন ফ্রি স্টাইলে চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন মাটি কাটা হলেও সহস্রাধিক কোটি টাকার কাজ যাদের মাধ্যমে হচ্ছে তাঁরা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ইটভাটা সবচেয়ে বেশি চরফ্যাশন উপজেলায়। এখানে অনেকগুলো ইটভাটা রয়েছে যারা নদীর পাড় কেটে মাটি নিয়ে ইটভাটায় তৈরি করছে ইট। এ উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের বেতুয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন কাজী ইটভাটা। নদী ভাঙনে সবচেয়ে ঝুঁকির্পূর্ণ এলাকা এটি। এখানে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ভাঙন রোধে। অথচ ফ্রি স্টাইলে নদীর পাড় এবং বনের জমি কেটে ইটভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে। বার বার বেতিয়ার লঞ্চঘাটটি ভেঙে গেলেও কারওই যেন টনক নড়ছে না। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ‘কাজী ব্রিক্স’ নামে দুটি ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। চরফ্যাশনের যুবলীগনেতা এবং পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মনির হোসেন এই কাজী ব্রিক্সের মালিক। এই ইটভাটায় ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গেলে তাঁর ভাগ্নে মো. রাকিব লেবার নিয়ে তেড়ে আসেন। এখানে প্রবেশ নিষেধ জানিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এসব বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা জানার পরই তজুমদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার ৩টি ইটভাটার মালিক পক্ষকে নোটিশ করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের সমস্যার কথা তুলে ধরে মাটি না কাটারা জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কথা না শুনলে পরবর্তী সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয় জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠিতে দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। পুরো বিষয়টি আমার জানা নেই। বনের ক্ষতি করে থাকলে বা কোনো অনিয়ম হলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।