অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় ভবনে ধস

আল-আমিন | ১৯:৫৮, মার্চ ০৬ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় ধ্বসে গেছে একটি একতলা ভবন। এই ঘটনায় পাঁচ জনকে আসামি করে বরিশাল আদালতে একটি মামলা করেন ভবন মালিক আইরিন জাহান। রবিবার ৩ মার্চ বরিশাল সদর উপজেলার ৫নং চরমোনাই ইউনিয়নের পশুরিকাঠী গ্রামের চাঁদেরহাট বাজারের হাওলাদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। চরমোনাই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শিশ মামুনের খামখেয়ালিপনার কারণে প্রবাসী বজলু রহমানের একতলা ভবনটি ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে ওই ভবনের একটি রুম ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ভবনের একাধিক অংশে ফাটল ধরেছে। ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ভবন ছেড়ে বাইরে অবস্থান করেছে। এ ঘটনায় বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সেলিম বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখতে পেয়েছি। ভবন বাসিন্দাদের পুলিশি হেফাজতে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এখনো বলা যাচ্ছে না। কারন ভবনটি পুরোপুরি ধসে যাওয়ার একটি আশংঙ্কা রয়েছে। মামলার সুত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শিশ মামুনের নির্দেশে রাশেদ সিকদার সহ আরো ৪/৫ জনের একটি দলবদ্ধ চক্র প্রবাসী বজলু রহমানের একতলা ভবনের পাশেই ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাসী বজলু রহমানের স্ত্রী আইরিন জাহান তাদের মাটি কাটতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা বিষয়টি কর্নপাত না করে মাটি কাটতে থাকেন। একপর্যায়ে ভবনের কয়েকটি স্থানে ছোট ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয়। ফাটলের একদিন পরেই ভবনের পশ্চিম পাশের ছাদ সহ একটি রুম ধসে পড়ে। স্বামীর কষ্টের টাকায় নির্মিত ভবন রক্ষা করতে উপায়ন্ত না পেয়ে একপর্যায়ে ইউপি সদস্য শিশ মামুনের পা ধরে মাটি কাটা বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। এ সময় ওই ইউপি সদস্য ভুক্তভোগী আইরিন জাহানকে বেধড়ক মারধর করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। বিষয়টি জানতে চাইলে ইউপি সদস্য শিশ মামুন বলেন, তাকে মারধরের কোন বিষয় ঘটেনি। তবে মাটি কাটার কারনে ভবনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। আমি তাদের ক্ষতিপূরন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ভবন মালিকের স্ত্রী আইরিন জাহান বলেন, আমার ভবনের সাথেই ভেকু বসিয়ে ইটভাটার জন্য মাটি কাটায় ভবনের একটি রুম ছাদ সহ ধসে পড়েছে। কয়েকটি জায়গায় ফাঁটল ধরেছে। ভবনটি এখন পুরোপুরি ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে আমার প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভবনটি রক্ষার জন্য আমি ওই ইউপি সদস্য’র পায়ে ধরি কিন্তু তিনি সহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। স্থানীয়রা জানায়, প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি ইট ভাটার অবস্থান। ওই ভাটার জন্য ইউপি সদস্য শিশ মামুন জোর করে এখান থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিভিন্ন জমিতে এভাবেই ভেকু বসিয়ে প্রায়ই মাটি কেটে নেয়। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম। তিনি বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও বসতবাড়ি সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যারা মাটি বা বালু তোলে তারা এই আইন মানে না। আইন অমান্য করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোতয়ালি থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী আদালতে একটি মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যে থানায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।