পায়রা বন্দরে মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় ছাত্রলীগের হামলায় উন্নয়ন কাজ বন্ধ

আল-আমিন | ২১:০৪, মার্চ ০৪ ২০২৪ মিনিট

পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দরের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দেওয়ায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ভাংচুর করা হয়েছে ঠিকাদার কোম্পানির অফিস। হামলা চালিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীসহ আহত করা হয়েছে পাঁচজনকে। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরের উন্নয়নমূলক কাজ। এই ঘটনায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ানিং কোম্পানি লিমিটেড। এতে অনিয়শ্চতায় পড়েছে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের যথাসময়ে উদ্বোধন। লিখিত অভিযোগপত্র ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়নকাজ করে আসছে ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ানিং কোম্পানি লিমিটেড। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়নকাজের স্থানে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে জিতু, রনি, সজীব মৃধা, বাশার, রাজা, তুহিন তালুকদার, উজ্জ্বল তালকুদার, জুয়েল তালুকদারসহ ৩০টি মোটরসাইকেলে ৭০ থেকে ৮০ জন বহিরাগত লোক পায়রা বন্দর এলাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত ৩০ লাখ টাকা প্রতি মাসে প্রদান না করলে পায়রা বন্দরে কোনো ধরনের কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন ও কাজ বন্ধ করে রাখেন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর সঙ্গীদের হামলায় ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, স্টোর কিপার মনির হোসেন, ড্রাইভার দুলাল মৃধাসহ পাঁচজন আহত হন। আহতদের কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকে বন্দরের উন্নয়নকাজ বন্ধ রেখেছে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই বিষয়ে ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে এসে আমাদের অফিসে হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীদের আহত করে। তারা প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়ে গেছেন। ওই দিনের পর থেকে পায়রা বন্দরের উন্নয়নকাজ এখন বন্ধ রয়েছে। আমরা এই ঘটনার পর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা ও চায়নিজ কোম্পানি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। কাজও চালু করা সম্ভব হয়নি।’ প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সব সময় আমাদের পাহারা দেয়। তাই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার বলেন, ‘আমরা কোনো চাঁদা চাইনি। পায়রা বন্দরে আমাদের জমি জমা গেছে। তাই এখানে আমরা কিছু কাজ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। তাই এটা নিয়ে আমাদের সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঝামেলা হইছে। এ বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ওই প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত একটি চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ানিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার লি জোইং এবং দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামের আলাদা দুইটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আগামী জুনের মধ্যে কাজ উদ্বোধন করা হবে। তবে কাজ বন্ধ থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কাজ না হলে যথাসময়ে প্রকল্প উদ্বোধন করা যাবে না।’