পর্যটকের ঢলে কুয়াকাটার পরিবেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা

আল-আমিন | ১৫:৩১, ফেব্রুয়ারি ২৫ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল সরকারি ছুটি। এর পরদিন বৃহস্পতিবার ছিল কর্মদিবস। আর পরের দুই দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। তাই অনেকেই বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে গেছেন কুয়াকাটা ভ্রমণে। ফলে দর্শনার্থীর ঢল নামে সেখানে। চলতি মাসে ভিড় এত বেশি যে, গড়ে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি দর্শনার্থী নামছেন কুয়াকাটা সৈকতে। পর্যটকের এই সংখ্যা ধারণক্ষমতার তিন গুণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা সেতু চালুর পর দর্শনার্থীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মতো কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ার আগেই এর ব্যবস্থাপনা জোরদার করা দরকার। গত শুক্রবার বরিশাল থেকে সপরিবারে কুয়াকাটায় বেড়াতে যাওয়া চাকরিজীবী মাসুদ আহমেদ বলেন, পর্যটকের এত চাপ যে, ভাড়া দ্বিগুণ দিয়েও হোটেলে রুম পাওয়া দুষ্কর। মানুষের ঢল নামলেও নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। শত শত গাড়ি আসছে, আর যাচ্ছে। পিকনিক পার্টির ঢল নামছে। পর্যটকেরা প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা বর্জ্য নির্বিচারে ফেলছেন যত্রতত্র। এতে সৈকত ও সমুদ্র যেমন নোংরা হচ্ছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে কুয়াকাটার পরিবেশ। কুয়াকাটা বে অব বেঙ্গল মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সভাপতি প্রভাষক মাহবুবুল শাহিন বলেন, কুয়াকাটায় সপ্তাহের বৃহস্পতি থেকে শনিবার প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার মানুষ আসছেন। কিন্তু ধারণক্ষমতা ২০ হাজারের মতো। এসব মানুষ কুয়াকাটার পরিবেশের ওপর কঠিন চাপ ফেলছে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ বেড়েছে; কিন্তু নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. হাফিজ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, পর্যটন এলাকায় মানুষ বেশি গেলে জলজ প্রাণী সরে যায়, পরিবেশ দূষিত হয়। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটায় যে ঝাউবন ছিল, তা হ্রাস পাচ্ছে। পিকনিক পার্টির লোকজন বর্জ্য সৃষ্টি করছেন। অথচ আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। কুয়াকাটায় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি পর্যটক নিয়ন্ত্রণে আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরিফ বলেন, পর্যটক বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ হাজার পর্যটক আসছেন। কিন্তু কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি পরিবেশ রক্ষায় মাসে একবারও সভা করছে না। জাতীয় নির্বাচনের পর আর কোনো সভা হয়নি। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের টিম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ বেড়েছে। পর্যটক বাড়লে সৈকতের ক্ষতি হবেই।