বরিশালে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে দুশ্চিন্তায় সাব্বির ও তার বাবা-মা

আল-আমিন | ১৫:২৪, ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক  : অভাবের কারণে ভর্তি পরীক্ষার কোনো বই কিনতে না পেরে অনলাইনে পড়াশুনা করে প্রথমবারেই মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রমজান খান সাব্বির। তবে ভর্তির ফি ও পরবর্তী ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই কৃষকের সন্তান ও তার বাবা-মা। তার বাবা ফিরোজ খান কৃষিকাজের সামান্য আয়ে ছেলের স্বপ্নপূরণে সবসময় পাশে থাকলেও এখন হিমশিম খাচ্ছেন মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে।বরিশালের উজিরপুরের শোলক ইউনিয়নে দামোদরকাঠি গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রাইভেট পড়ার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। পরীক্ষার কোনো বইও কিনতে পারেননি। “বোনের উপহার পাওয়া ডিজিটাল শুমারির ট্যাব দিয়ে অনলাইন ও ইউটিউব থেকে দেখে পড়াশুনা করেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। পরীক্ষায় ৬৭.৭৫ নম্বর পেয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।” ছোটবেলা থেকে মেধা ও পরিশ্রমকে সঙ্গে নিয়ে অভাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সাব্বির বলেন, “বাবা সব সময় বলছেন যত কষ্ট হোক স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবেন। বাবার এ আশ্বাসে নবম শ্রেণিতে যখন বিজ্ঞান বিভাগ নেই, তখন থেকেই লক্ষ্য ঠিক করি চিকিৎসক হব।” তিনি জানান, সেই লক্ষ্য পূরণে উজিরপুরের এইচএম ইনস্টিটিউট থেকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরে ভর্তি হন সরকারি গৌরনদী কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ ৫। সাব্বিরের বাবা ফিরোজ খান বলেন, “আল্লাহর রহমতে সাব্বির পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কীভাবে ছেলেকে ভর্তি করব আর পড়ালেখার খরচ বহন নিয়েও চিন্তায় আছি।” ঋণ করে হলেও ছেলেকে ভর্তি করানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। সাব্বিরের মা সাহিদা বেগম বলেন, তার মেয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, ক্লাসে প্রথম হওয়ায় উপহার হিসেবে জনশুমারিতে ব্যবহৃত ট্যাব পেয়েছিল। মেধাবী দুই সন্তানের গর্বিত এই মা আরও জানান, তার স্বামী কৃষি কাজ করেন। যখন টাকা থাকে তখন গামছা বিক্রির ব্যবসা করেন। এ দিয়ে চার জনের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তবুও ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। এখন সন্তানের মেডিকেলে ভর্তি ও ভবিষ্যৎ ব্যয় নিয়ে চিন্তায় থাকা এই মা ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। সাব্বিরের প্রতিবেশী বুলবুল মিয়া নিজের সন্তানকে মেডিকেলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, প্রতিমাসে মেডিকেল পড়ুয়া সন্তানের জন্য ব্যয় সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। মাসে এত টাকা ব্যয়ের সামর্থ্য সাব্বিরের পরিবারের নেই। তাই মেধাবী সাব্বিরের জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তবে আশার কথা, সাব্বিরের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উজিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “তাকে দেখা করার জন্য খবর দিয়েছি। আমি ওকে সব রকমের সহায়তা করবো। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সাথেও আমার কথা হয়েছে। তারাও সব রকমের সহায়তা করবেন।” এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও সাব্বিরের পাশে থাকবেন বলে জানান এই ইউএনও।