জেলেকে কুপিয়ে হত্যার রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন আহত জেলে

আল-আমিন | ১৭:৪৮, ফেব্রুয়ারি ১৮ ২০২৪ মিনিট

লোভ সামলাতে না পেরে জেলেকে কুপিয়ে হত্যার পর সাগরে ফেলে ট্রলারসহ মাছ লুটের রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা আরেক জেলে জামাল হোসেন। শ্বাসরূদ্ধকর সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আহত জামাল। পটুয়াখালীর কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন জেলে জামাল জানালেন, কীভাবে তাদের তৃতীয় সঙ্গী ইব্রাহিম নির্দয়ভাকে কুপিয়ে রাশাদ খানকে (৩২)হত্যা করে পানিতে ফেলেন। এরপর তাকেও কুপিয়ে লাথি দিয়ে পানিতে ফেললে  কীভাবে ৩ ঘণ্টা ভেসে ভেসে তীরে পৌঁছান। জামাল বলেন, এবার ট্রলারে মাছ বেশি পাওয়ায় লোভ সামলাইতে পারে নাই ইব্রাহিম। ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে রাশেদের পেট কেটে খুন করে ফালাইয়া দেয়, পরে আমারে কোপাইতে থাকে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই আমাকে বাংলা দা দিয়া পিটান শুরু করে ইব্রাহিম। কোনো কথাই বলার সুযোগ দেয় নাই সে। আমি তখন রাশাদকে বারবার ডাকলে ইব্রাহিম বলে, ‘ওরে কাইটা নদীতে ফালাইয়া দিছি। ’ এরপরই আমারে এলোপাতাড়ি কোপ আর পিটান দিয়া লাথি মাইরা পানিতে ফালাইয়া দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা নদীতে ভাসছি, কয়েকটি ছোট ছোট ট্রলার দেখে পাশে গেলেও অন্ধকারে দেখতে পায় নাই কেউ। ৩ ঘণ্টা পর কূল পাইছি। তিনি আরও বলেন, সারারাত সাঁতরিয়ে কূলে আইতে সকাল হয়ে যায়। এ সময় একটি ঘর দেখতে পাই। ওই ঘরের লোকজনকে বলি, ভাই আমারে বাঁচান। সাগরে মোগো ট্রলার ডাকাতি কইরা একজনকে খুন করছে, আমাকে কোপাইয়া পানিতে ফালাইয়া দেছে। কোন জায়গায় আমি উঠছি নাম কইতে পারমু না। উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতের দিকে কূলে ফেরার পথে পটুয়াখালীর গলাচিপার পানখালীর দণি বঙ্গোপসাগরে জেলে রাশাদকে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেয় ইব্রাহিম। এ সময় ট্রলারের আরেক জেলে জামালকে কুপিয়ে জখম করে নদীতে ফেলে দেয়। পরে ট্রলারসহ মাছ লুট করে বিক্রি করতে এসে জনতার হাতে ধরা পড়ে ঘাতক জেলে ইব্রাহিম (৩৮)। এ সময় ইব্রাহিমকে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। নিহত রাশা পটুয়াখালী জেলার রাঙাবালি উপজেলার চরমোন্তাজ এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে ও লুট হওয়া ট্রলারটির মালিক। অন্যদিকে ঘাতক ইব্রাহিমের বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার অঙ্কুজান পাড়ায়। ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও রাশাদের লাশ পাওয়া যায়নি। এদিকে নির্মমভাবে হত্যার বিচার চান নিহতের পরিবার। তারা বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় একজন মানুষকে হত্যা করা হলো। আমরা এর কঠোর বিচার চাই। নিহত রাশেদের ভাই তুহিন মিয়া বলেন, মানুষের সঙ্গে শত্রুতা থাকতেই পারে, এমন শত্রুতার প্রতিশোধ হিসেবে  হত্যা করতে হবে! আমার ভাইকে যেমনভাবে হত্যা করেছে  ঠিক তেমনি ইব্রাহিমের বিচার চাই। পাথরঘাটা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আটক ইব্রাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা ট্রলার ও আসামি ইব্রাহিম পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থানায় হস্তান্তর করেছি। ওই থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।