১৫শ কোটি টাকার পায়রা সেতুতে লুটপাটের মহোৎসব
পটুয়াখালী-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘পায়রা সেতুর’ টোলের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেতুর টোল আদায় হলেও অর্থ লুটপাট ঠেকাতে পারেনি প্রযুক্তি। সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই অর্থ লুটের মহোৎসব অব্যাহত রেখেছে পটুয়াখালী সওজ বিভাগ। এ বিষয়ে পটুয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী এএম আতিকুল্লাহর কাছে ২০২৩ সালের ৬ জুন লিখিতভাবে তথ্য চাইলেও আজ পর্যন্ত তিনি তা দেননি। পরে কৌশলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন-‘সেতু থেকে ২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত টানা ৯ মাসে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা এবং ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত টানা এক বছরে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৫ হজার ৭৯৫ টাকা টোল আদায় হয়েছে।’ অথচ সূত্র বলছে, সওজের দেয়া ওই তথ্যের চেয়ে পায়রা সেতুতে দুই থেকে আড়াই গুন বেশি টোল আদায় হয়েছে।
এসব জানতে সওজের কাছে একাধিকবার তথ্য চাইলেও তারা নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই প্রকৌশলীর কাছে গেলে তিনি আবার আবেদনের পরামর্শ দেন এবং পূর্বের আবেদন পাননি বলে দাবি করেন।
টোলের দুই-তৃতীয়াংশ লুটপাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনি কি পেয়েছেন সেটা আপনার ব্যাপার। আমাকে তথ্য দিতে হলে জেনে দিতে হবে। অন্যদিকে এসব প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সওজ। যে কারণে পায়রা সেতু সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০১৩ সালের ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর লেবুখালী ফেরিঘাটসংলগ্ন পায়রা নদীর ওপর ‘পায়রা সেতুর’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ২০২১ সালে নির্মাণ শেষ হবার পর ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করেন এবং সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। চট্টগ্রামের কর্নফুলী সেতুর আদলে নির্মিত ফোরলেন বিশিষ্ট ১২৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে অ্যাপ্রোচ সড়কের ‘পায়রা সেতু’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪৪৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ৪ মার্চ যানবাহন পারাপারে সেতুর টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ীই টোল বহাল রয়েছে।
সূত্র বলছে, সেতু খুলে দেয়ার পর টোল আদায়ে নিযুক্ত করা হয় এমএম বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। যানবাহন চলাচল শুরু হলে ওভার লোডেড যানবাহন পারাপারের ক্ষেত্রে স্কেল ব্যবহার না করায় অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎসহ অব্যস্থাপনার অভিযোগ ওঠে সওজের বিরুদ্ধে। সেতুর অব্যবস্থাপনা নিয়ে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্কেল ব্যবহার শুরু করে সওজ। এতে টোলের অর্থ বাড়লেও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। সূত্র বলছে, শুরু থেকেই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে টোল আদায় করছে সওজ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় হলেও প্রতিদিন আদায় করা টোলের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ ভাগাভাগি ও লুটপাট করছেন সওজের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়াও টোল আদায়ে নিয়োজিত সংস্থা ও শ্রমিকরাও যে যার মতো অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এসব প্রসঙ্গে কথা বলতে তৎকালীন পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সারা দেননি। আর পটুয়াখালী সওজের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ করিম এবং বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম আজাদ রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তারাও সারা দেননি।