বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু কলোনির ত্রাস আল-আমিন অবশেষে গ্রেফতার

আল-আমিন | ১১:০৬, ফেব্রুয়ারি ০৭ ২০২৪ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : কীর্তনখোলা নদীতীর লাগোয়া জনপদ বঙ্গবন্ধু কলোনীর ভয়াত্মক সন্ত্রাস আল আমিনকে অবশেষে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। সদলবলে স্থানীয় দোকানিকে কুপিয়ে জখমের মামলায় আসামি হয়েও দীর্ঘদিন প্রকাশ্য অবস্থান করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসার মধ্যেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াজুলের নেতৃত্বে ১১ নং ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু কলোনী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওই কলোনীর বাসিন্দা সোহরাব পালোয়ানের পঞ্চাশোর্ধ্ব স্ত্রী মনি বেগমসহ ছেলে-স্বজনদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে আল আমিন এবং তার গুন্ডাবাহিনী। সেই লোমহর্ষক ঘটনায় বাহিনীপ্রধান আল-আমিনসহ ১১ সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় মনি বেগম একটি মামলা করলে তাদের ৯ জন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়। তবে আল আমিন এবং তার বাহিনীর অপর এক সদস্য বাপ্পি ছিলো ধরাছোয়ার বাইরে, তদন্ত কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম নেননি কোনো ব্যবস্থা এমন অভিযোগ নিয়ে ভুক্তভোগী সোহরাব পালোয়ানসহ স্ত্রী মনি বেগম পুলিশ কমিশনারের স্মরণাপণ্ন হন। একাধিক সূত্র জানায়, স্থানীয় কাউন্সিলর মজিবর রহমানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আল আমিন বঙ্গবন্ধু কলোনীতে অপরাধের একটি স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে। ১৫ থেকে ২০ জনের একটি বাহিনী তৈরি করে আল আমিন পুরো কলোনীসহ চাঁদমারী এবং আশপাশ এলাকাসমূহে সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তাদের অনাচার-অত্যাচারে কলোনীবাসী ওষ্ঠাগত হলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস দেখাচ্ছে না ইজ্জত হারানোর ভয়ে। সূত্র জানায়, শুধু মনি বেগম নন, ইতিপূর্বে এই সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন স্থানীয় আরও বহু মানুষ। এমনকি খোদ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে কোপানোর অভিযোগও আছে আল আমিনের বিরুদ্ধে। গত বছরে আল আমিন বাহিনী স্থানীয় বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান এবং তার ছেলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এই টাকা না পেয়ে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে আল আমিন অন্তত ১৫ থেকে ২০ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ধারালো অস্ত্রসমেত ওই ব্যক্তির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করতে অগ্রসর হয়। তখন কামরুলের স্ত্রী মোসা. ফরিদা বেগম প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। এসময় যুবক আল আমিনসহ তার বাহিনীর অপরাপর সদস্যরা নারীসহ বেশ কয়েকজনকে মারধরসহ কুপিয়ে জখম করে। এই খবর পেয়ে নগর বিশেষ শাখার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলে আল-আমিন বাহিনী এ পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে জখম করে। প্রকাশ্য রাস্তায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফেলে কোপানোর এই চিত্র স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা প্রত্যক্ষ করলেও কেউ তখন ভয়ে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করার সাহস দেখায়নি। ফলে অনেকটা সিনেমেটিক স্টাইলে হামলা চালিয়ে মারধরসহ কুপিয়ে জখম করে চলে যায় আল আমিন বাহিনী। পুলিশ-সাংবাদিকসহ নারী-পুরুষ কোপানোর সেই ভয়াত্মক সন্ত্রাসের ঘটনায় আল আমিনসহ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যখন ৫টির বেশি মামলা বিচারাধীন, ঠিক তখনই নতুন করে ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কলোনীতে রক্তপাত ঘটিয়ে আলোচনায় আসে আল আমিন। তবে গত বছর পুলিশ সাংবাদিকসহ ১০ জনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় তাকে কারাগারে যেতে হয়। তিনটি মামলায় সে বেশকিছু দিন হাজতবাস করেছিলেন। কিন্তু মোটেও শোধরায়নি আল আমিন, জামিনে মুক্ত হয়ে ফের বঙ্গবন্ধু কলোনীতে চালাতে থাকে ত্রাস, যার সর্বশেষ শিকার মনি বেগম এবং তার ছেলেসহ স্বজনেরা। ভুক্তভোগী মনি বেগম জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কুপিয়ে জখমের মামলা হলেও আল আমিন এবং বাপ্পিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছিল না। ফলে সে এলাকায় অবস্থান নিয়ে পুর্বের ন্যায় ত্রাস চালাতে থাকে এবং সর্বশেষ তাদের একটি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। এই বিষয়টি মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলামকে একাধিকবার অবহিত করা সত্ত্বেও তিনি আল আমিন এবং বাপ্পিকে গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেননি। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আল আমিন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে যখন গোটা কলোনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল এবং মামলার বাদীর স্বজনদের হুমকি-ধামকির ওপর রাখছিল তখন পুলিশ কর্মকর্তা রিয়াজুলের কাছে এ প্রতিবেদক প্রশ্ন রেখেছিলেন তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তখন পুলিশ কর্তা দাবি করেছিলেন আল আমিন এবং বাপ্পি পলাতক রয়েছে। তাছাড়া মামলা হলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না মন্তব্য করেছিলেন এসআই রিয়াজুল। তদন্তকারী কর্মকর্তার এমন অপেশাদারমূলক আচারণ এবং আসামিদের সাথে সখ্যতা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবিরের কাছে অভিযোগ করেন সোহরাব পালোয়ান। সন্ত্রাসী আল আমিনকে গ্রেপ্তারের খবরে ভুক্তভোগী সোহরাব পালোয়ানসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বস্তি দিয়েছে। কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি আরিচুল হক  জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বঙ্গবন্ধু কলোনী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। তবে আল আমিনকে অবশেষে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও সোহরাব পালোয়ানের আতঙ্ক বেড়েই চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, আল আমিনকে গ্রেপ্তারের পরপরই তার সাঙ্গপাঙ্গরা মামলার বাদী মনি বেগমকে এলাকায় খুঁজতে শুরু করে দেয়। আত্মরক্ষার্থে পরিবার নিয়ে সোহরাব পালোয়ান অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে আছেন।’