ধরা ছোঁয়ার বাহিরে মাদকের মূলহোতা বুলেট

কামরুন নাহার | ১১:৩০, এপ্রিল ২২ ২০২০ মিনিট

বিশেষ প্রতিবেদক ।। ৬ সঙ্গীসহ যশোরের সীমান্ত চেকপোস্ট বেনাপোল থেকে মাদকের বৃহৎ একটি চালান বরিশালে নিয়ে আসার পথে এক সহযোগী বিজিবির হাতে আটক হলেও কৌশলে বুলেট খান পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তার সাথে ছিলো আরো ৫ ব্যক্তি। এ নিয়ে বিজিপি বরিশাল র্যাবকে অবহিত করলেও পালিয়ে আসাদের অবস্থান এখন নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে এই চক্রের মূলহোতাই হচ্ছে বুলেট খান। যার মাদক আনার কৌশল হচ্ছে শিক্ষক, চিকিৎসক ও আইনজীবীদের সমন্বয় পর্যটকের ছদ্ববেশে প্রায় সীমান্ত এলাকায় ঘুরে সুলাভে ফেন্সিডিল ক্রয় করে মোটরসাইকেল যোগে বরিশালে ফিরে আসা। গত সোমবার ৬ সদস্যের একটি দল বেনাপোলে ঘুরে ফিরে মাদকের একটি বৃহৎ চালান নিয়ে বিকেলে বরিশাল আসার প্রাক্কালে বিজিপির কাছে সুমনকে ফাঁসিয়ে দিয়ে অপর ৫ ব্যক্তি কৌশলে পালিয়ে এসে আত্মগোপনে চলে যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইন পোর্টালে চলে আসার পর বুলেট খানের মাদক বাণিজ্যের বিষয়টি বিভিন্ন মহলের দেয়া তথ্য-উপাত্তে খোলসা হয়ে যায়। ইতোপূর্বে বুলেট খান মাদকসহ আটক হলেও আ’লীগ ঘরোনার ব্যক্তি হিসেবে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। মূলত বুলেট বরিশাল শহরে এলিট শ্রেণির ব্যক্তিদের কাছে এই মাদক সরবহর করে আসছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তার ক্রেতার তালিকায় রয়েছে চিকিৎসক থেকে আইনজীবী। এখন তরুণ শিক্ষকদের একটি অংশকে ক্রেতার তালিকায় নিয়ে এসেছে এই যুবক। সুশ্রি ওভার স্মার্ট এ সর্মাট এবং কথা বার্তায় উচ্চ শিক্ষা দিক্ষার ছাপ থাকায় বুজে ওঠার উপায় নেই বুলেটের প্রকৃত বাণিজ্য কি। তবে এই যুবক নিজেকে একজন ঠিকাদার ও পল্ট্রিফিড ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাছাড়া পারিবারিকভাবে বিত্তশালী এবং তার পিতা চরবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রয়াত আ’লীগ নেতা তোতা মিয়ার বরিশালের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ নাম পরিচয় ও প্রভাব রয়েছে। বুলেট নিজে ফেন্সিডিলের নেশায় আসক্ত হওয়ার পর এই ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্তি করেন, বেনাপোল হয়ে ওঠে তার আমদানি স্পষ্ট। সূত্রমতে, গত বছর শবে বরাতের রাতে শহরের চৌমাথা এলাকায় ফেন্সিডিলসহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল। একাধিক সূত্র জানায়, তার অগ্রজ ভাই যুবলীগ নেতা শাহিন খান ওরফে নায়ক শাহিন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ডিবি পুলিশকে বাগে নিয়ে এসে বুলেটকে ছাড়িয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ সময় ডিবি পুলিশে সাথে এক লাখ টাকার চুক্তিতে ওই রাতেই সমাধান মিলে। এরপর কমবেশি বরিশালে নানা মহলে বুলেটের কাছে ফেন্সিডিল মজুত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। অপর একটি সূত্রের দাবি, বরিশাল শহরে আইনজীবী-চিকিৎসক ও শিক্ষকদের একটি অংশ এখন ফেন্সিডিলের নেশায় আসক্ত। এই শ্রেণির ভদ্রবেশি লোকেরাই বুলেটের মূল খদ্দের। ঘটনাচক্রে বুলেটের সাথে যুক্ত হয় বরিশাল আদালতের বিতর্কিত আইনজীবী লিখন। ফেন্সিডিল সেবনের দায়ে লিখনকে গত বছর বরিশাল আইনজীবী সমিতি তার সদস্যপদ বাতিল করে দেয়। তবুও সার্কিট হাউজ সম্মুখে চেম্বার খুলে মামলার মক্কেল দেখার বদলে সেখানেই ফেন্সিডিলের আসর জমিয়ে তোলে। রসদ জোগায় বুলেট। এই গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অস্বীকৃতির শর্ত জুড়ে দিয়ে জানান, ফেন্সিডিল আমদানির ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিতেই পর্যটকের ছদ্ববেশ ধারণ করে প্রায় তারা দলবেঁধে বেনাপোল সীমান্তে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করে। তাদের ভ্রমণ ছদ্ববেশ দেখে এ পর্যন্ত কারো বুজে ওঠা সম্ভব হয়নি নেপথ্যের উদ্দেশ কি? একাত্রিতভাবে ফেন্সিডিলের চালান আনা বর্তমান সময়ে দুরাহ হয়ে ওঠায় তারা পর্যটকের ছদ্ববেশ ধারণ করে মোটরসাইকেল বরিশাল থেকে বেনাপোল পৌছে ফিরে আসার প্রাক্কালে সকলের পিঠে থাকা স্কুল ব্যাগে ফেন্সিডিল নিয়ে আসা হয়। গত শনিবার এই চক্রের ৬ সদস্য বেনাপোলে তিনটি মোটরসাইকেল যোগে পৌছে একদিন সেখানে অবস্থান শেষে যে যার কাদে থাকা ব্যাগে ফেন্সিডিল নিয়ে বরিশাল ফিরছিলো। বেনাপোল ছেড়ে আসার পর অনতি দুরে কাগজ পুকুর নামক এলাকায় বিজিপির টহল টিমের সামনে পরে ৬ যুবক। সকলে ডাক্তার, শিক্ষক ও আইনজীবী পরিচয় দেয়ার পর বুলেট ও লিখনসহ অপর তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের সঙ্গীয় সুমনের পিঠে থাকা স্কুল ব্যাগ সন্দহের বসত তল্লাশী করার পর বিজিপি বিস্মিত হয়। ততক্ষণে বুলেটসহ অপরাপর সঙ্গীরা বিজিপির নাগল থেকে বেড়িয়ে এসে গ্রামীণ পথ ধরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুমন নিজেকে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু নিশ্চিত হওয়া গেছে আসলে তিসি ওই স্কুলের কোন পর্যায়ের শিক্ষক নন। তবে শিক্ষাগতা পেশার সাথে জড়িত। সুমনই পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিজিপির কাছে সবিস্তার নাম পরিচয় প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে লিখন ও বুলেট বাদে অপর ৩ হচ্ছেন, সদর হাসপাতালের ডাক্তার মিঠু, উত্তরা ব্যাংক কর্মকর্তা ডোনা ও ব্যবসায়ী মনির। এদের প্রত্যেকের বসত বরিশাল শহরে। বিজিপির একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদকে জানান, এই চক্রটির সম্পর্কে বরিশাল র‌্যাব-৮ কে অবহিত করে তাদের আটকে অনুরোধ জানিয়েছে। বরিশাল র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য স্বীকার করে বলেন চক্রটি সন্ধানে তারা ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। তারা নিশ্চিত হয়েছে এখনো তারা বরিশালে ফিরেনি। কিন্তু তাদের পরিচয়-পরিচিত শোনে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার মত নয় যে, আদৌতে তারা প্রথম শ্রেণির পেশাদার ব্যক্তির অন্তরালে মাদকের সাথে জড়িত। বিশেষ করে বুলেট ও লিখনের বিষয় তারা নিশ্চিত হয়েছে। এ নিয়ে অনুসন্ধন প্রাক্কালে পালিয়ে আসাদের একজন এই প্রতিবেদকে জানান, তিনি প্রকৃত অর্থে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী কিন্তু সঙ্গীরা বেনাপোল ঘুরে আসার তাগিদ দেয়ায় লকডাউনে অলস সময় কাটাতে তাদের দলে যুক্ত হয়েছিলেন। অপর একটি সূত্র বলছে বুলেটের বিষয় স্থানীয় পুলিশ কম বেশি ওয়াকিবহল। কিন্তু আ’লীগ ঘরোনার লোক হওয়ায় তাকে টলাতে চায় না। অথচ বুলেটেই বরিশালের চিকিৎসক মহলে ফেন্সিডিল সরবাহরকারীদের মধ্যে অন্যতম। বিস্মিয়কর বিষয় হচ্ছে, নানা সূত্র নিশ্চিত করে বলছে, বরিশালে তরুণ থেকে প্রবীণ বয়সি অনেক চিকিৎক এখন ফেন্সিডিলে আসক্ত। বুলেট হচ্ছে এই জগতের সম্রাট।  বুলেট এখন কোথায় তার কোন হদিস দিতে পারেনি কোন মহল। তার সেলফোনও বন্ধ।