বামনায় ইউপি চেয়ারম্যানকে বরখাস্তে ডিসির সুপারিশ
বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের শিংড়াবুনিয়া গ্রামে ১২ বছর আগে এক মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ওই ইউনিয়নের তৎকালীন ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য সুপারিশ করেছেন বরগুনার সদ্যোবিদায়ি জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। নিহত ওই ব্যক্তির নাম মো. হাবিবুর রহমান সিকদার। তিনি পার্শ্ববর্তী কাঠালিয়া উপজেলার চিংড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা।
গত ২০ জুলাই তিনি ওই চেয়ারম্যানকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে দাবি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তদন্ত প্রতিবেদনসহ একটি আবেদন করেন। এর আগে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের বড় তালেশ্বর গ্রামের জনৈক লিটন মোল্লা নামে এক ব্যক্তি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর হত্যা মামলায় চেয়াম্যানের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে তার অপসারণের দাবি জানিয়ে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পরিষদ-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের ২ নভেম্বর স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বরগুনা জেলা প্রশাসনকে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। প্রতিবন্ধীকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা ও তিনি মামলার প্রধান আসামি হওয়ায় বরগুনা জেলা প্রশাসক তাকে অপসারণের জন্য সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
২০১২ সালের মামলা সূত্রে জানা গেছে, সে বছর ২২ মার্চ উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের শিংড়াবুনিয়া গ্রামে চোর সন্দেহে গ্রামবাসীরা এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে আটক করে মারধর করেন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে জনগণের হাতে মার খাওয়া ওই ব্যক্তিকে পুনরায় চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ ও তার সহযোগীরা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে মারধর করেন। ওই বৃদ্ধের শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের সেঁক দেওয়া হয়েছিল, এমনকি তার পুরুষাঙ্গেও আঘাত করা হয়েছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দিন রাতেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঘটনার দিন রাতের বেলা তিনি কাঠালিয়া থেকে হেঁটে ভুলপথে পাথরঘাটার নাচনাপাড়া গ্রামে বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভুলক্রমে শিংড়াবুনিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তখন চোর সন্দেহে তাকে গ্রামবাসী আটক করে মারধর করেন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে হাসান সিকদার বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজকে প্রধান আসামি করে মোট চারজনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরিত হলে তদন্তে আরো চারজন আসামি যুক্ত হয়।
তবে এই হত্যাকাণ্ডে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ জড়িত ছিলেন না দাবি করে তিনি জানান, যখন শিংড়াবুনিয়া থেকে আমি খবর পাই একজনকে চোর সন্দেহে আটক করা হয়েছে, তখন আমি বামনা সদরে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমাকে যারা সংবাদটি জানিয়েছিল তাদের তখনই আমি বলেছি যাতে তার ওপর কেউ আঘাত না করে। আমি বুকাবুনিয়া পরিষদে আসার পর স্থানীয়রা আমার কাছে তাকে নিয়ে আসে। ততক্ষণে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। আমি পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানেই তিনি মারা যান। আমি তার গায়ে হাত দিইনি। অথচ রাজনৈতিক শত্রুদের পরামর্শে আমাকেই প্রধান আসামি করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বলেন, বরগুনা জেলা প্রশাসক মহোদয় গত বছর নভেম্বর মাসে আমার কাছে বুকাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জিআর ৪২/২০১২ নম্বর মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে লিখিত চিঠি পাঠায়। আমি গত ৩১ মে ওই মামলার বিষয়ে বামনা থানার অফিসার ইনচার্জকে ২২১ নম্বর স্মারকের চিঠির মাধ্যমে জানতে চাই। থানা থেকে আমাকে মামলাটির বিষয়ে যে কাগজপত্র দেয়, আমি সেগুলো জেলা প্রশাসকে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর ওই বিষয়ে কী হয়েছে আমার জানা নেই।
এ ঘটনায় সদ্যোবিদায়ি বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের ব্যক্তিগত ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।