বিএনপির নন অথচ দলের নাম ভাঙিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ১৯:২৭, মে ৩০ ২০২৩ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির কেউ অংশগ্রহন না করলেও দলের নাম ভাঙিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের পুত্র কামরুল আহসান ওরফে রূপণ। তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও কুটকৌশলে দলীয় সুবিধা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার এ অপকৌশল কোনভাবেই সমর্থন করবে না বিএনপির ভোটাররা। মেয়র প্রার্থী রূপণ জানেন বরিশালে রয়েছে বিএনপির একটি বড় ভোটব্যাংক। আর সেসব ভোটারদের নিজের দিকে টানতে প্রচার-প্রচারণায় তিনি বিএনপির ঘরনার বলে দাবী করছেন। শুধু তাই নয়, যারা ধানের শীষ করবে তারা তার নির্বাচনী প্রতীক টেবিল ঘড়িতে ভোট দিবে। তবে তার এ ধরনের চিন্তা কেবল হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন মহানগর বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা। তারা জানিয়েছেন, রুপম কে? তাকে বরিশালবাসী কয়জনেই বা চেনে। তাছাড়া সে দলীয় কোন গুরুত্বপূর্ন পদে নেই। এমনকি দলের দুর্দিনে তার কোন অস্তিত্ব ছিল না রাজপথে। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসে মেয়র হবার স্বপ্ন কোনদিনই পুরন হবে না। আগে দল ও দলের কর্মীদের জন্য অন্তত কিছু করুক তারপর স্বপ্ন দেখুক। সূত্রে জানা যায়, তার বাবা আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর থেকেই সিটি করপোরেশনের স্ব-ঘোষিত মেয়র বনে যান রুপন। সিটি করপোরেশনে পদ বানিজ্য, অর্থ আত্মসাত, ঘুষ লেনদেন সহ নানা দুর্নীতিতে আলোচনায় আসেন তিনি। সেই সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে বাবা মেয়রের চেয়ারে অসীন থাকায় তেমন বেগ পেতে হয়নি তাকে। তবে সাদিক মেয়র হওয়ার পর আড়ালে চলে যান রুপণ। সাদিক মেয়র থাকাকালীন সময়ে বিগত পাঁচ বছর এই রুপনের দেখা না মিললেও সাদিক মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর নিজেকে আলোচনায় আনতে এই কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এদিকে রূপণ ‘বিএনপির কেউ নন’ বলে দাবি করে আসছিলেন দলের নেতারা। অথচ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের যে তালিকা তৈরি করেছে নগর বিএনপি সেখানে রয়েছে ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুলের নাম। এই তালিকা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে পাঠিয়ে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। দলের কথা বলে নির্বাচনে প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে, নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাকে আপনারা টেনে এনে গুরুত্ব বাড়াচ্ছেন কেন? তিনি আমাদের দলের কে? তাকে কোনো দিন বরিশালের রাজনীতির অঙ্গনে কেউ দেখেছে? তার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার তো কোনো বিষয় নেই।’ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা পাঠাইনি, কেন্দ্রই তালিকা করেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র।’ নগর বিএনপির আহ্বায়ক তালিকা করার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও দলটির একাধিক নেতা বলেছেন, ১৯ জনের একটি তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কামরুল আহসানের নামও আছে। এই নেতারা বলছেন, তবে তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়। সেখানে আরও দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে। তাঁরা হচ্ছেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের (১৬, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড) প্রার্থী ও নগর বিএনপির সাবেক সদস্য মজিদা বোরহান এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দিতাকারী নগর বিএনপির সাবেক সহশিশুবিষয়ক সম্পাদক ইউনুস মিয়া। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ১৯ জনের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে মেয়র পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে কামরুল আহসানের নাম রয়েছে।’ কামরুল বিএনপির কেউ নয় বলে দাবি করা হচ্ছে, তারপরেও কেন তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হলো এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদুর রহমান বলেন, কামরুল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এই পদের কারণে তাঁর নাম এসেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও দলের ব্যানারে কেন প্রচারনা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন। দলের জন্য তার অবদান অনেক। তার অসমাপ্ত অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো আমি করে যাবার চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমি ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসেনি তাই বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তবে অন্তর জুড়ে রয়েছে দলের ভালবাসা। অপর এক প্রশ্নে বহিষ্কারের সুপারিশের জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আমি “বিএনপি করি না, বিএনপির কে” সেই প্রশ্ন যাঁরা করছেন, তাঁরা আসলে না বুঝেই করছেন। এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে আমি বিএনপি করি কি না, সেটা তাঁরাই প্রমাণ করে দিয়েছেন তালিকায় আমার আমার নাম উঠিয়ে।’ এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যে সব বিএনপি নেতারা এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের তালিকায় রয়েছে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপনের নাম।