নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুই অংশ এক হয়নি। নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে খোকনেরই ভাতিজা মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি। তা ছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশে বিএনপির কোনো নেতা মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাঁদের সমর্থক ভোটার তো রয়েছে। বিএনপি তাঁদের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যেতেও নির্দেশনা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বিরোধী পক্ষের মন জয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন খোকনের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে খোকন। সে হিসেবে তাঁর স্ত্রীর রয়েছে একাধিক জাতীয় সংসদ, ঢাকা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে নারীদের নিয়ে প্রচারের অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকনের চেয়ে তাঁর স্ত্রীই বেশি যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
লুনার হাত ধরে ভোটের মাঠে জেবুন্নেছাও : সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে গত এপ্রিলে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই সময় ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাদের সঙ্গে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজকেও দেখা গিয়েছিল। সাদিক মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জেবুন্নেছা আফরোজ অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। অথচ গত ২০ মে শনিবার রাতে নগরীর সিঅ্যান্ডবি গ্যারেজ এলাকায় খোকনের একটি নির্বাচনী মতবিনিময়সভায় যোগ দেন সাবেক একই সংসদ সদস্য।শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। শনিবারের সভায় খোকনের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। এতে অতিথি হিসেবে যোগ দেন জেবুন্নেছা আফরোজ। এ সময় তিনি হাত উঁচু করে আগত ভোটারদের শুভেচ্ছা জানান। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রার্থীর পক্ষ থেকে যে উপদেষ্টা কমিটি করা হয়েছে, ওই কমিটিতে জেবুন্নেছা সদস্য হিসেবে আছেন। সাদিকপন্থী হিসেবে পরিচিত জেবুন্নেছা ওই দিন প্রথম মাঠে নৌকার ভোট চান।
ভোটারের দ্বারে দ্বারে লুনা : প্রতিদিন সকাল ৮টার পরে নারী কর্মীরা লুনা আব্দুল্লাহর কালু শাহ সড়কের ভাড়া বাসায় ভিড় করেন। তাঁদের সঙ্গে থাকেন বিভিন্ন এলাকার নারী ভোটাররা। সেখানে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে একের পর এক বৈঠক। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমস্যা নিয়ে আসেন ভোটাররা। তাঁদের কথা ধৈর্য ধরে শোনেন লুনা। পাশাপাশি সমাধানও দেন। দুপুরের খাবার সেরে মাঠে নেমে পড়েন লুনা। যে ওয়ার্ডে পরিচিতি সভা থাকে, তার আশপাশের ওয়ার্ডগুলোতে হেঁটে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান। নারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সে ক্ষেত্রে কে কোন দলের সেটি বিবেচনা করেন না তিনি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আখতারুজ্জামান হিরু মেয়র সাদিকের অনুসারী। লুনা আব্দুল্লাহ সম্প্র্রতি তাঁর বাসায় গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁর অসুস্থ স্ত্রীর খোঁজ নেন লুনা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আখতারুজ্জামান হিরু বলেন, ‘লুনা ভাবি এসেছিলেন। নৌকার পক্ষে স্থানীয়দের কাছে ভোট চাইতে বলেছেন। আমরা নৌকার পক্ষেই আছি।’
লুনা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নৌকার ভেতরে যেমন প্রতিপক্ষ আছে, ঠিক তেমনি বাইরেও আছে। দুই পক্ষকে প্রতিপক্ষ না ভেবে সবার ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছি।’প্রতিপক্ষরা কেন নৌকায় ভোট দেবেন এ প্রশ্নে লুনা বলেন, ‘পরিবারের একজন হয়তো নৌকার প্রতিপক্ষ, কিন্তু গোটা পরিবার নয়। তাদের পরিবারে গিয়ে নারীদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে মেয়র ফজলে নূর তাপসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। গেল সিটি নির্বাচনে মেয়র সাদিকের পক্ষে বস্তি এলাকায় ভোট চেয়েছি। আমার ভাশুর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পক্ষে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় ভোট চেয়েছি। এমনকি খুলনার সংসদ সদস্য শেখ জুয়েলের নির্বাচন করেছি। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই স্বামীর জন্য নারী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’
লুনা জানান, তাঁর শাশুড়ি আমেনা বেগম বঙ্গবন্ধুর বোন। সেই ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সময় কেটেছে। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কিভাবে রাজনীতিতে উঠে এলেন, সেই গল্প শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা প্রায়ই তাঁদের ফুফু আমেনা বেগমকে দেখতে ধানমণ্ডির (লুনাদের) বাসায় যেতেন। তাঁদের দেখেই ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন বলে জানান লুনা।
খোকনের নির্বাচনী কার্যালয়ের প্রধান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি লস্কর নুরুল হক বলেন, নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ শুধু পরিচিতি সভায় অংশগ্রহণ করেন না, নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তাঁকে পরিচালনা করতে হয়। তাই পরিচিতি সভার বাইরে গিয়ে তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে পারছেন না। তবে এরই মধ্যে প্রার্থীর স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। নারী ভোটারদের বোঝাচ্ছেন, যাতে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দেন। সূত্র: কালের কন্ঠ