ভরপাশায় স্কুলের সাথেই ইটভাটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

কামরুন নাহার | ০০:৫৬, মে ২৪ ২০২৩ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১১ নং ভরপাশা ইউনিয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ভাটার চুল্লীর ধোঁয়া, ধূলোবালি ও ইট পোড়া গন্ধে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষক ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসছে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। ইউনিয়নের পুর্ব ভরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ইটভাটা গড়ে তুলেছেন ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মামুন। তবে ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করলেও মিলছে না সুফল। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফিক্সট চিমনির সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে এ ভাটায় ইট পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের পাশেই গড়ে তুলেছেন এই ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় ভাটাটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ভরপাশা গ্রামের বাসিন্দা বাদল বেপারি বলেন, আমাদের গ্রামের গিয়াস মিয়ার ছেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন মিয়া পরিবেশের তোয়াক্কা না করে মদীনা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন। ইটভাটার কাছেই ভরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেশকিছু বসতি ঘরবাড়ি আছে। প্রতিনিয়ত ইটভাটার ধুলোবালি ও কালে ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা। তিনি আরো বলেন, মদীনা ইটভাটার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে পরিবেশ অধিদফতর সহ সরকারি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও মামুন মেম্বারের ক্ষমতার জোরে বন্ধ হচ্ছে না তার অবৈধ ইটভাটা। একই কথা জানিয়েছেন আরেক লিখিত অভিযোগকারী ওই গ্রামের বাসিন্দা মোতাহার আলী। তিনি বলেন, ইটভাটা চালু হওয়ার পর গতবছর হঠাৎ একদিন আমার ছেলে স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইট পোড়ানোর ধোঁয়ায় তার শ্বাসকষ্টসহ একাধিকবার বমিও করেছে। পরে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়। এছাড়া স্কুল মাঠের বিভিন্ন গাছের ফল ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। পরিপক্ক হওয়ার আগেই পচন ধরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে। ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে (২০১৩ এর সংশোধনী) উল্লেখ রয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ১০০ মিটার দূরে ভাটাটি স্থাপন ও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ইট পোড়ানোর কাজ করে ওই ইউপি সদস্য। কোন ক্ষমতায় ভাটার মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করে আসছেন তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। লিখিত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো: আব্দুল মালেক বলেন, বাকেরগঞ্জের ভরপাশা ইউনিয়নে মদীনা ব্রিকসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে আমরা শীগ্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে কোনভাবেই ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। মদীনা ব্রিকসের ইটপ্রস্তুত ও পোড়ানোসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।