পটুয়াখালীতে স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় এমপি পুত্র কারাগারে
নিজেস্ব প্রতিবেদক|২১:১৪, মে ২০ ২০২৩ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতনের মামলায় পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সাবেক এমপির পুত্র রাইসাল হাসান ইভানকে (৩৪) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ১৬ মে রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর ১৭ মে সকালে ঢাকা জজ আদালত-২০ এ হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। এর আগে গত ১৫ মে আদাবর থানায় স্বামী রাইসাল হাসান ইভান, শাশুড়ি কাছিরা আমিন ও ননদ লুবনা বিনতে আমিনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন স্ত্রী হোমায়রা ইয়াসমিন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল বাউফলের সাবেক এমপি প্রয়াত রুহুল আমিনের পুত্র রাইসাল হাসান ইভানের সঙ্গে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে হোমায়রা ইয়াসমিনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ইভান বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে বিভিন্ন ধরনের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেন।
স্ত্রী হোমায়রা বাধ্য হয়ে নিজের বাড়ি থেকে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ৩ লাখ টাকা এনে ইভানকে দেন। এর কিছুদিন পর ইভান ফের তার স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করেন। এবার ইভানের দাবি অনুযায়ী আরও ২ লাখ টাকা এনে দিতে দেন হোমায়রা। তারপরেও তাকে বিভিন্ন সময় মারধর করতে থাকেন ইভান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে ইভান স্ত্রীর কাছে ব্যবসা করার জন্য ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। তাছাড়া স্ত্রীর বাবার বরিশাল শহরের বাড়ির ১টি ফ্লাট লিখে দিতে বলেন। তখন স্ত্রী টাকা ও ফ্লাট দিতে অস্বীকার করলে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন স্ত্রী হোমায়রা ইয়াসমিন। পরে আহত অবস্থায় হোমায়রাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করলে তার গর্ভে থাকা সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
তখন হোমায়রা মামলা করতে চাইলে ইভানের পরিবার হোমায়রার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টা সমঝোতা করে ফেলে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ফের ইভান স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রীকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে ইভান, তার মা ও বোন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী হোমায়রা আদালতের আশ্রয় নেন।
ভুক্তভোগী হোমায়রা ইয়াসমিন বলেন, আমার শাশুড়ি ও ননদের ইন্ধনে আমার স্বামী যৌতুক এর জন্য আমার উপর প্রায়ই নির্যাতন করতো। আমার অনলাইন বিজনেস আছে, আমার ইনকাম এর টাকা দিয়ে চলতো ইভান। তাতেও তাদের হচ্ছিলো না। বারবার আমাকে টাকা এনে দিতে বলতো। দেরি হলে অত্যাচার করতো। তবুও সহ্য করেছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, তাই চাইনি সংসার ভাঙুক। তারা এতটাই পাষণ্ড যে আমাকে মেরে আমার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছে। সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা ও বরিশালের আমার বাবার বাড়ির ফ্লাট লিখে দেওয়ার জন্য প্রচুর মেরেছে আমাকে। আমি এক ধরনের বাধ্য হয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
মামলার ২য় আসামি আছিরা আমিনের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে এক নারী পরিচয় না দিয়ে বলেন, আমি এ বিষয় কিছুই জানি না। বাসার লোকজন বাইরে গেছে। তারা ফিরলে আপনাকে ফোন দিতে বলবো। এরপরে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে আদাবর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, গত ১৫ মে মামলা রুজু হয়েছে। ১৬ মে রাতে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে ১৭ তারিখ সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।