বাকেরগঞ্জে স্কুলের নামে জোর পূর্বক গাছ কেটে জবর দখলের চেষ্টা

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২১:০৮, মে ২০ ২০২৩ মিনিট

মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া জে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক দপ্তরি কুলসুম বেগম তার জমিতে লাগানো অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ করেন একই বিদ্যালয়ের বহুল বিতর্কীত পকেট কমিটির সভাপতি আশুতোষ ভ্রম্য ও একাধিক ছাত্রী কেলেংকারী সহ নানান অপকর্মের হোতা প্রধান শিক্ষক কুদ্দুসুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ বিষয় ভুক্তভোগী কুলসুম বেগম গতকাল ১৯ শে মে শুক্রবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, কুলসুম বেগমের পৌত্রিক সূত্র ভোগ দখলে থাকা ১৫০ নং বোয়ালিয়া মৌজার ৭৪১ নং খতিয়ানের ২০৯৪ নং দাগের ৩১ শতাংশ জমির উপর ২০/২৫ বছর আগে বনজ ও ফলজ গাছ রেইট্রি, মেহগিনি, চাম্বল সহ আম কাঁঠালের গাছ রোপন করেন। স্কুল সংলগ্ন উক্ত জমিতে বেড়ে ওঠা মূল্যবান গাছগুলোর উপর কু-নজর পরে স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের। তারা বেশ কিছু দিন ধরে গাছগুলো কেটে নিবার ফন্দি আঁটে, কিন্তু সফল হতে পারেনি। অবশেষে অত্যান্ত ধুরন্ধর এ চক্রটি নানান অজুহাত সৃষ্টি করে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কুদ্দুস হাওলাদার কে চাকরি থেকে বের করে দেয়।  এমনকি তার পাওনা বকেয়া টাকা ও পরিশোধ করেনি কতৃপক্ষ। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময় শুক্রবার (১৯/০৫/২৩) বন্ধের দিনে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হয়ে ৭/৮ জনের একটি গাছ কাটা গ্র“প ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে গাছগুলো কেটে ফেলার চেষ্টা চালান। সংবাদ পেয়ে কুলসুম বেগমের ছেলে শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে গাছ কাটতে বারণ করেন। কিন্তু সে মূহুর্তে উপস্থিত কমিটির সভাপতি আশুতোষ ও প্রধান শিক্ষক কুদ্দুসুর রহমানের লোকজন তাঁকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রানে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে গাছ কাটা অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীতে নিরুপায় অসহায় কুলসুম বেগমের ছেলে শহিদুল ৯৯৯ এ কল দিয়ে জরুরী পুলিশের সহায়তা কামনা করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাছ কাটতে বারণ করেন এবং জমির কাগজপত্র দেখতে চান। তা সত্বেও গাছ কাটা অব্যাহত রাখেন এবং জমির বিষয় কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এক পর্যায় পুলিশ কঠোর হয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন এবং উপস্থিত লেবারদের ওখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে যান। সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কর্মীরা ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। ঘটনার বিষয় সত্যতা নিশ্চিত হন। এ বিষয় স্কুল কমিটির সভাপতি আশুতোষের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এ বিষয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মিটিং এ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে যথাযথ রেজুলেশন সই স্বাক্ষর নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয় সবার একই মত। গাছগুলো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রোপন করা এবং জমিও বিদ্যালয়ের ভোগ দখলে থাকা জমি। এ সংক্রান্ত দলিল ও কাগজ পত্র যথারীতি আবডেট আছে, কিন্তু এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি এ বিষয় সাংবাদকর্মীদের নাক গলাতে বারণ করেন। বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা বনকর্মকর্তা মানবেন্দ্রনাথের কাছে জানাতে চাইলে তিনি এ বিষয় কিছু জানেন না বলে জানান। অথচ বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকারি এমপিও ভুক্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ যেকোনো পরিস্থিতিতে কাটতে হলে বনবিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন আছে। অনুমতি ছাড়া বনজ/ফলদ গাছ কাটা এক ধরণের ফৌজদারী অপরাধ। এছাড়াও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিষয় খোঁজ নিতে বেড়িয়ে আসে নানান অনিয়ম দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কাহিনী। বেশ কয়েকমাস ধরে সাধারণ শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বকেয়ার কারণে মানবতর জীবন যাপন করছেন এসব শিক্ষক কর্মচারীরা। অথচ প্রতিমাসে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। শিক্ষার মান নিুমুখী, এমন কি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া উপহার মোবাইল সেট তালিকাভুক্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা হাতে পাননি। এছাড়া ছাত্রী কেলেংকারীর মামলা সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঐতিহ্যবহী এই বিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে দ্রুত যথাযথ কতৃপক্ষের সুদৃষ্ট কামনা করছেন। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মাসুদুজ্জামান জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।