নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন জমে উঠেছে আর এই নির্বাচনে চমক হিসেবে এসেছে হাতপাখা। ইসলামপন্থী এই রাজনৈতিক দলটি এবার বরিশাল, গাজীপুর সহ সবগুলো সিটি করপোরেশনে আলোচনায় এসেছে এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোথাও কোথাও জাতীয় পার্টিকেও তারা পেছনে ফেলেছে। হাতপাখা ইসলামী দলটি ছাড়াও আরও বেশ কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দল এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঐক্যবদ্ধভাবে করার জন্য একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে ২০১৮ নির্বাচনের পরে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনমুখী তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে এই দলগুলো ভালো ভোট পেয়েছে। কোথাও কোথাও তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির দিক থেকেও ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে এই দলগুলোর যারা প্রার্থী তারা ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন এবং কোথাও কোথাও তারা জনগণের মধ্যে আলোচিত হচ্ছেন। এরকম প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামী দলগুলো আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়াতে পারে।
বিএনপি বলেছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছে যে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এরকম পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উৎসবমুখর এবং অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ জরুরি।
বিশেষ করে ২০১৪ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে সেভাবে নির্বাচন যেন কোনো অবস্থাতেই না হয় সেটি আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করতে চায়। আর একারণেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামী দলগুলোকে মাঠে নামানো হচ্ছে কিনা তা নিয়ে কারো কারো মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তবে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে তারা এমনটি মনে করছেন না।একাধিক কারণে বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর নীরব উত্থান ঘটছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রথমত, বিএনপির ভুল রাজনীতি। বিএনপি একটি সময়ে মৌলবাদ এবং ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর অভিভাবক হিসেবে ছিলো। জামায়াত ইসলাম ছাড়াও আরও আটটি ইসলামী দল ২০ দলীয় জোটের মধ্যে ছিলো। কিন্তু বিএনপি এখন ২০ দলীয় জোটকে মৃত ঘোষণা করেছে। ফলে ২০ দলীয় জোটের কোনো অস্তিত্ব এখন দেখা যাচ্ছে না। এই রকম বাস্তবতায় ইসলামী দলগুলো অস্তিত্ব রক্ষার জন্য স্বউদ্যোগে নিজেরাই সচেষ্ট হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিএনপি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের মন জয়ের জন্য তারা একটি অসাম্প্রদায়িক সেকুলার রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণের প্রাণান্ত চেষ্টায় লিপ্ত। আর এ কারণেই যারা ধর্মভীরু এবং মৌলবাদী চিন্তা-চেতনা ধারণ করেন তাদের জন্য আর বিএনপি ভালো পছন্দ নয়। তারা বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
ইসলামী দলগুলো গত কিছুদিন ধরেই তাদের ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে তাদের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় যে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আগে যে বিভক্তি এবং মতদ্বৈততা ছিলো সেটি আস্তে আস্তে কেটে যেতে শুরু করেছে। ফলে ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচন করলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের মেরুকরণ ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।