নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়ে উভয় সংকটে হাসনাত আবদুল্লাহ

নিজেস্ব প্রতিবেদক | ২১:১৪, মে ১৮ ২০২৩ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হাসনাত আবদুল্লাহ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তদারকির জন্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করেছে। দলের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ৯ সদস্যের এই কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে। এই কমিটি গঠন আসলে একটি কৌশলের খেলা এবং এই কৌশলের খেলায় এখন উভয় সংকটে পড়েছেন একসময় বরিশালের আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বরিশালের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সর্মথকরা হাতপাখাকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং এর ফলে সেখানে রাজনীতির একটি নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত আছেন এবং তারা এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল ৯ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কমিটি গঠন আসলে একটি কৌশলের খেলা এবং এই কৌশলের খেলায় এখন উভয় সংকটে পড়েছেন একসময় বরিশালের আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এই নির্বাচনের যদি শেষ পর্যন্ত খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হয়, তাহলে বরিশালের রাজনীতিতে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ অধ্যায়ের সমাপ্তি শুরু হবে। কারণ খোকন সেরনিয়াবাতের নেতৃত্ব আসলে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং তার ছেলে কোণঠাসা হয়ে পড়বেন এবং এখানে আওয়ামী লীগের নতুন বিন্যাস তৈরি হবে। আর যদি তিনি এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হয়েও খোকন সেরনিয়াবাতকে হারিয়ে দেন তবে সেটি হবে হাসনাত আবদুল্লাহর জন্য আরেকটি বিপর্যয়। কারণ তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হওয়ার পরও যদি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয় তাহলে সেটির দায়দায়িত্ব সবই পড়বে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর উপর। ফলে তিনি আরেকটি সংকটে পড়বেন। আর এটিই হলো রাজনৈতিক কৌশল। আওয়ামী লীগ সভাপতির কৌশলের খেলায় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ আরেকবার কোণঠাসা হয়ে পড়লেন। এখন তিনি শ্যাম রাখি না কুল রাখির মত অবস্থায় রয়েছেন। এই রকম পরিস্থিতিতে তার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করা। কারণ খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হলে শেষ পর্যন্ত আবার রাজনীতিতে তার রাজত্ব পুনরুদ্ধার একটা সুযোগ হবে। আর যদি তিনি খোকন সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধচারন করেন, সেক্ষেত্রে তিনি বরিশালের রাজনীতিতে অপাংক্তেয় হয়ে উঠতে পারেন। এখন দেখার বিষয় কৌশলের খেলায় আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ কি করেন। উল্লেখ্য, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ এবার নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি মেনে নেননি হাসনাত আবদুল্লাহ। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তিনি এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তিতর্কের যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু সেই যুদ্ধে তিনি হেরে গেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে মনোনয়ন বোর্ডের সভা ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টাতেও তিনি সফল হয়নি। অবশেষে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এতকিছুর পরও শেখ হাসিনার মন টলাতে পারেননি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বরং শেখ হাসিনা খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়ে তার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। এরপর থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ আর বরিশালে যাননি এবং তার অনুগত বাহিনীরা খোকন সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছে। এ নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে কিছু সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আর এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।