খোকন সেরনিয়াবাতকেই ঘিরে সরব হিরনপন্থীরা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:০২, এপ্রিল ৩০ ২০২৩ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে খোকন সেরনিয়াবাতকেই ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবারো সরব হয়েছেন হিরনপন্থীরা। দীর্ঘ ১৫ বছর বরিশালের রাজনীতিতে কৌশলে তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছিল। সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরই বিপাকে পড়ে তার সাথে চলা দীর্ঘদিনের এসব রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। নেতৃত্বের অভাবে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এতে সাংগঠনিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তারা। অস্তিত্ব সংকটে পড়েন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এমন দশা থেকে মুক্তি দিতে সহধর্মিণী জেবুন্নেছা আফরোজ রাজনীতির হাল ধরলেও স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। রাজনৈতিক পালাবদলে জেবুন্নেছা আফরোজ ধীরে ধীরে সাদিক আবদুল্লাহর রাজনীতিতে নিজেকে মেলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে হিরন অনুসারীরা রাজনীতির মাঠে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তবে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের নাম ঘোষণা হওয়ার পরই নিরবতা ভেঙে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন হিরনপন্থীরা। গত কয়েকদিন যাবত বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাদের। বরিশালের নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধনে বেশিরভাগ শওকত হোসেন হিরনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, শওকত হোসেন হিরন যেখান থেকে বিজয়ের সূচনা করেছিলেন নগরীর সেই একই জায়গায় সার্কেট হাউজের বিপরীতে নৌকার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করলেন খোকন সেরনিয়াবাত। গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ওই কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারী অনুপস্থিত থাকলেও সরব ছিল হিরনপন্থী হাজারো নেতাকর্মী। একই চিত্র দেখা গেছে পরের দিন গত শনিবার বরিশাল শিল্পকলা একাডেমীতে। সেখানে বরিশাল মহানগরের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। যুবলীগের আহবায়ক নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সাবেক ভিপি জসিম উদ্দিন, বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি জাকির হোসেন, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ান, মঈন তুষার, বরিশাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-মামুন ছাড়াও নব্বইয়ের দশকের বেশ কয়েকজন দাপুটে ছাত্রলীগ নেতাসহ হিরনপন্থীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মত। এসময় সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে যার কষ্টের কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, বরিশালের রাজনীতি বাপ ও ছেলের কাছে জিম্মি। তাদের বিপরীতে যাদের অবস্থান, তারা বরাবরই কোণঠাসা। তাদের দাপটের মুখে কথা বলতে ভয় পান জেলা ও মহানগরের প্রথম সারির অনেক নেতা। মূলত তাদের কারণেই বরিশালে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। অপরদিকে অনুষ্ঠানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি বলেন, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন ভয়ানক খারাপ অবস্থায় রয়েছে, আমি চাই এটিকে পুন:গঠন করতে। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করবো যাতে করে একটি সুন্দর নগরী তৈরি হয়, মানুষ সম্মান পায়, মানুষকে যেন নির্যাতিত হতে না হয়। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ভাই আমাকে যে সাপোর্ট দিচ্ছেন এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আর শামীম ভাই যদি ঠিক থাকতে পারি ইনশাআল্লাহ বরিশালকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বলেন, বরিশালের মানুষ এতদিন জিম্মি ছিলো, খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনায়ন দেয়ার মধ্য দিয়ে বরিশালবাসী মুক্ত হয়েছেন। ইনশআল্লাহ আগামী সিটি নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাতকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করে বরিশাল নগরীকে নতুন বরিশাল হিসেবে গড়ে তুলবো আমরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদেক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর শওকত হোসেন হিরনপন্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ২০১৯ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে সাদিক অনুসারীদের নিয়ে যার ফলে রাজনীতি থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজে হিরনপন্থীদের। নেতৃত্বের অভাবে অধিকাংশ নেতারা নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে জাহিদ ফারুক শামীম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। শুরুর দিকে যুবলীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন ছাড়া কেউ সাহস পায়নি জাহিদ ফারুক শামীমের কাছে যেতে। তবে ধীরে ধীরে হিরনপন্থী অনেকেই ভীড় করে এমপি শামীমের কাছে। তবে এমপি’র কাছে ভিড়লেও এভাবে সরব ছিল না হিরনপন্থী নেতা-কর্মীরা। মূলত খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাবার পরই নিরবতা ভেঙে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন সাদিক বিরোধীরা। এতদিন সাদিক আবদুল্লাহর যেসব নেতা-কর্মীরা দাপুটের সাথে বরিশালের রাজনীতিতে শাসকের ভূমিকায় ছিল আজ তাদের বিচরণ কেবলমাত্র কালিবাড়ি জুড়েই সীমিত। শুধু তাই নয়, সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ পাঁচ খলিফা হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক নীরব হুসেন টুটুল, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনিম এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খানকে বরিশাল নগরে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। এদের মধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচন করবেন কিনা এ বিষয়ে তেমন কিছু প্রকাশ্যে না বললে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন, যেখানে তাদের নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন সেখানে তাদের নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া প্রায় এক মাস বরিশালের রাজনীতিতে সাদিক আব্দুল্লাহর এই পাঁচ খলিফার নিরবতায় আবারো চালকের আসনে সেই পুরনো ত্যাগী হিরনপন্থীরা। যারা কিনা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করতে সক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। এসময় মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন শিকদার বলেন, হিরন ভাই যেভাবে বিএনপির ঘাটিতে প্রথম ধাক্কা দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন একইভাবে খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় সু-নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরবো আমরা। খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে আরো মাঠে নেমেছেন শওকত হোসেন হিরনের অনুসারী শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মীর আমিনুদ্দিন মোহন, মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আফতাব হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান হাওলাদার, রুপাতলী বাস টার্মিনাল সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ সহ হিরনপন্থী অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী।