এসএন পলাশ ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগে সৃষ্ট বিভক্তি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছে। পাশাপাশি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বর্তমান মেয়র ও নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় এ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করছে। এমনকি তার নিরবতা নগরবাসীর মনে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগে সৃষ্ট বিভক্তি দৃশ্যমান ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজারো নেতা-কর্মী জড়ো হলেও অনুপস্থিত ছিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারী নগর আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্ডের অধিকাংশ নেতা। কেবলমাত্র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর ও জেলার সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, গতকাল শনিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বরিশাল সিটি নির্বাচন উপলক্ষে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায়ও দেখা যায়নি সাদিক আব্দুল্লাহ সহ তার অনুসারিদের।
তাছাড়া প্রায় এক মাস বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহর অনুপস্থিতিতে তার অনুসারিরা অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক মনোনয়ন বঞ্চিত হবার পর চলতি মাসের ১৮ এপ্রিল ক্ষণিকের জন্য ভিডিও কনফারেন্সে নেতা-কর্মীদের নৌকা বিজয়ী করতে নির্দেশনা দিলেও মহানগর আওয়ামী লীগ কিংবা ৩০টি ওয়ার্ডের কোন দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে সরব দেখা যাচ্ছে না। অথচ আওয়ামী লীগের এসব নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই সাদিক আব্দুল্লাহর কালীবাড়ি বাসভবন ঘিরে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে খোকন সেরনিয়াবাতের পাশে দেখা যায়নি, যা কিনা চলমান সিটি নির্বাচনে নৌকার জন্য নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে আসার পর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরকে তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাত্র এক দিন দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে তাকে কিংবা তাঁর কোনো অনুসারীকে খোকন সেরনিয়াবাতের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। এমনকি দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করার কথাও বলেছিলেন এই নেতা। কিন্তু সাদিক মনোনয়ন বঞ্চিত হবার পরই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। প্রতিদিনই মহানগর ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে সাদিক আব্দুল্লাহর কালীবাড়ি কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এই নেতার অনুসারির। সাদিকের অনুপস্থিতিতে নতুন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নেমে কাজ করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, মেয়র সাহেব আসবেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌকার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। তাই নৌকার প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।’ তবে বর্ধিত সভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত।
সাদিক আবদুল্লাহর অদৃশ্য থাকার বিষয়ে বাসদ নেত্রী মনিষা চক্রবর্তী বলেন, মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় লোকলজ্জায় তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখছেন। এতে করে ভোগান্তীতে পড়েছেন নগরবাসী। যদি তিনি আসতে আরো দেরি করেন তাহলে নগরীর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হোক। তাছাড়া ব্যক্তিস্বার্থ থেকেই তিনি তার চাচার সাথে দ্বন্দ্ব জড়িয়েছেন। যা তার দল এবং জনগনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।