বাকেরগঞ্জে জেলেদের চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৩১, এপ্রিল ০৮ ২০২৩ মিনিট

মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নে জেলেদের নামে বরাদ্ধকৃত ভিজিএফ এর চাল বিতরণে চুরি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম না মেনে পরিবহণ খরচ এবং ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে মাপে আট থেকে দশ কেজি করে চাল কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে । সরেজমিনে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে তদারকির দায়িত্বে থাকা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জহির মোল্লা জানান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস ও চেয়ারম্যান কেহই আমাকে এ বিষয়ে জানায়নি এবং চাল কত তারিখ দিবে তাও জানায়নি। আমাকে ফোন দিয়ে বলছে আগামীকালকে কার্ডের মাল দেয়া হবে। জেলেদের চাল দেয়া হচ্ছে সেটা আমাকে জানানো হয় নাই এবং এ বিষয়ে আমি জানিও না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমি ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদে এমন অনিয়ম চললেও ইউপি চেয়ারম্যান জানান, আমি বরিশালের বাসায় আছি। বিষয়টি আমি জানিনা। তবে চাল দিতে গেলে একটু আকটু এরকম হয়। যদি বড় ধরনের কোন অনিয়ম হয়ে থাকে আমি বিষয়টি দেখবো। ভুক্তভোগীরা জানান, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ কালে ইউনিয়নের ৫০০ জেলেদের মধ্যে ১৬০ জন জেলের প্রত্যেককে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে ৪০ কেজি করে মোট ৮০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩০/৩২ কেজি চাল। জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের চলতি রমজানে খাদ্যের চাহিদা পূরণে ভিজিএফ’র চাল বিতরণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কোনো প্রকার খরচ ছাড়াই জেলেদের প্রতি মাসে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসের ৮০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু এ চাল বিতরণকালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৭ নং কবাই ইউনিয়নে ২৪ মার্চ বুধবার ১৬০ জন জেলের মধ্যে চাল বিতরণের সময় প্রত্যেককে দুই মাসের যায়গায় এক মাসের চাল দেয়া হয়েছে। তাও প্রত্যেককে ৮ থেকে ১০ কেজি করে কম দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ উপকারভোগী সাধারণ জেলেরা। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও তদারকির দায়িত্বে থাকা ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মামুন তালুকদার ও ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল বাশার শিকদার এই দুই ইউপি সদস্যের যোগসাজোসে কিছু অসাধু জেলেদের সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবারই জেলেদের চাল কম দিয়ে চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা আত্মসাৎ করেন । উপকারভোগী জেলে মোঃ সুমন আকন, আঃ রাজ্জাক ফরাজী, আমজাদ হাওলাদার, নাসিমা বেগম, মোঃ মনির সহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারের ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদেরকে দেয়া হয় ৩০/৩২ কেজি করে। আজকেও চাল নিতে এসে দেখি প্রত্যেকের বস্তায় ৮ থেকে ১০ কেজি চাল কম আছে। আমাদের ঠকানো হচ্ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, তারা যতবারই চাল নিতে আসেন ততবারই মাপে কম পেয়েছেন। এখন যে চাল দিচ্ছে সে চালও ভালো না। এক বস্তা ভালো হলে বাকি তিন বস্তা থাকে পোকায় খাওয়া। দুই রকম চাল মিশিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। চাল বিতরণকারী কর্মীরা জানান, পরিবহণ খরচ এবং ঘাটতির কথা বিবেচনা করে তালিকায় থাকা সবার মাঝে সমানভাবে বণ্টনের উদ্দেশ্যে পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং নেতৃস্থানীয় জেলেদের নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে কবাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হক (বাদল) তালুকদার বলেন, ‘জেলেদের চাল বিতরণের জন্য পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্ব-স্ব ওয়ার্ডের মেম্বারের উপস্থিতিতে চাল বণ্টন করা হয়। আপনারা যে অনিয়মের অভিযোগটি জানিয়েছেন এ বিষয়ে আমার নজরে আসেনি, এটা যদি কেউ করে থাকে আমি ব্যবস্থা নেব। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, অনিয়মের বিষয়টি আমি শুনেছি তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি ‘বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে ফোন দিয়েছি এবং জেলেদের প্রাপ্য চাল সঠিকভাবে মেপে দেয়ার জন্য বলছি। এরপরেও যদি কোন অনিয়ম করে থাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।