বাকেরগঞ্জে ফের বেপরোয়া ফজলু ও হেলাল বাহিনী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩৮, এপ্রিল ০৪ ২০২৩ মিনিট

  মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া বাজারে প্রতিপক্ষকে মারধর করতে সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু ফজলু মোল্লা ও হেলাল মোল্লা বাহিনীর লোকজন দেশিয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এতে জীবননাশের আশংকায় বোয়ালিয়া বাজারে যেতে পারছে না সংখ্যালঘু কয়েকটি পরিবার। ওই হিন্দু পরিবারগুলোসহ কয়েকটি মুসলিম পরিবারও চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। শনিবার (১ এপ্রিল) উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে একটি সরকারি রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে একজন কিশোরকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া সায়েদ মোল্লার প্রাইমারি স্কুল থেকে ধোপা বাড়ির পাকা রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা এলজিইডি প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ কাজ চলমান। বাবলাতলা ধোপা বাড়ির পাকা রাস্তা সংলগ্ন মুখে রাস্তা নির্মাণের জন্য শ্যামল কর্মকারসহ কয়েকটি হিন্দু পরিবার জমি ছেড়ে দিলেও বাঁধ আটেন চম্পা বেগম। জমি ছাড় দেয়া তো দূরের কথা তিনি তার জমির পাশ দিয়ে কোনক্রমেই উক্ত রাস্তা নির্মাণ করতে দিবেন না বলে বাঁধা দেয়। এমনকি তিনি তার ভাই স্থানীয় সন্ত্রাসী ফজলু মোল্লা ও হেলাল মোল্লার সহযোগীতায় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে শনিবার নির্মাণাধীন রাস্তার মাঝখানে একটি টিনের ঘর তোলার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন এতে বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা রনি ঘরামি (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। রনি ঘরামি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার সময় হামলার প্রতিবাদে স্থানীয়রা কয়েকজন সন্ত্রাসীকে অবরুদ্ধ করে রাখলেও থানা পুলিশ গিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেয়। এমনকি এ বিষয়ে আহত রনি ঘরামির মা শিউলি বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ এখনো পযন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যে কারনে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংখ্যালঘু বিশ্বজিত চক্রবর্তী জানায়, নির্মাণাধীন রাস্তাটি বোয়ালিয়া বাবলাতলা গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য খুবই প্রয়োজন। রাস্তা নির্মাণের জন্য তিনিসহ কয়েকটি পরিবার জমি ছেড়ে দিলেও চম্পা বেগম রাস্তা নির্মাণে বাঁধা দিচ্ছে। শনিবারের হামলায় রনি ঘরামি নামে একজন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করলেও চম্পার সন্ত্রাসী ভাই ফজলু মোল্লা ও হেলাল মোল্লারা বোয়ালিয়া বাজারে মহড়া দিচ্ছে। ফের হামলার আশঙ্কায় তিনি ও এলাকার কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন বোয়ালিয়া বাজারে যেতে পারছেন না। একই বক্তব্য শ্যামল কর্মকার, কালা কর্মকার, হাসান তালুকদার, ও শহিদ ঘরামীর। বোয়ালিয়া গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন হাওলাদার জানান, উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৮নং ওয়ার্ডে এলজিইডির একটি রাস্তার কাজ চলমান। ইতিপূর্বে চম্পা বেগম ও তার সন্ত্রাসী ভাইয়েরা রাস্তা নির্মাণে কয়েকবার বাঁধা দিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ বিষয়ে আহত মোঃ রনি ঘরামি সহ স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলে সৌরভ হাওলাদার তার ঘর থেকে দা আনিয়া রনি ঘরামিকে এলোপাতাড়ি কোপায়। স্থানীয় লোকজন আহত রনিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা দিতে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে শাহিন হাওলাদার জানান, নাসির হাওলাদারের বোনর জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মান কাজ চলছে। আজ সেই জমিতে নাসির হাওলাদার ঘর নির্মান করতে যায়। আমার ছেলে সৌরভ বোয়ালিয়া গরু কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়। তখন রাস্তা থেকে আমার ছেলেকে নাসির হাওলাদার ডেকে নেয়। ঘটনাস্থলে আমার ছেলের উপর প্রতিপক্ষ হামলা চালায়। তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। বাকেরগঞ্জ থানা ইনচার্জ এস এম মাকসুদুর রহমান জানান, বোয়ালিয়ার ঘটনায় উভয় পক্ষের দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।