নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওমরাহ হজ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ট্যুরস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হোটেলের বিল না দেওয়া, দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন না করানো, খাবার না দেওয়া ও রিয়াল দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শাহরিয়ার হক ও তারা মা শাহানারা আক্তার ওমরাহ পালন করতে মক্কা যান। কিন্তু দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস কোম্পানি থেকে হজ পালনের প্রক্রিয়া সারা হলেও তাদের মক্কায় পাঠানো হয় জীবন ট্রাভেলস্ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। মক্কাতে তাদের জন্য যে হোটেল রুম দেওয়া হয়, সেই রুমে আরো দুজন পুরুষকে দেওয়া হয়। যার কারণে তারা আপত্তি করেন। পরে অন্য রুমে তাদের শিফট করা হয়।
একইভাবে মদিনায় গিয়েও অন্য রুম নিলেও তার টাকা দেয়নি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস কোম্পানি। এ ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের আটকে দেয়। পরে তারা বাংলাদেশ থেকে ৩২ হাজার ৬শ টাকা পাঠিয়ে হোটেল ছাড়েন। আর হোটেলে থাকার সময়ে খাবার দেওয়া হয়নি ৪ দিন। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়েছে তাদের। এমনি মক্কা মদিনায় থাকাকালীন দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করেননি ট্রাভেল কোম্পানি। ডা. মো. শাহরিয়ার হক অভিযোগ করে বলেন, ওমরাহ করতে যাওয়ার আগে রিয়াল করে দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকার বিনিময় আমাদের ১৮ হাজার ৫শ রিয়াল দেওয়া হয়েছে। ২৮ টাকা দরে রিয়াল হলে আমাদের পাওয়ার কথা ছিল ১৯ হাজার ৬০৭। কিন্তু ১৩শ ১ রিয়াল কম দিয়েছে। যার বাংলাদেশি মূল্য ৩৬ হাজার ৪শ টাকা। এসব অভিযোগ ও অতিরিক্ত ব্যয়ের টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টে দেখে নেওয়া ও খারাপ আচরণ করে দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস। এ বিষয়ে আমার মা বাদী হয়ে একটি অভিযোগ করেছেন।
এর আগেও দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস এর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের হজে নিয়ে এক সাংবাদিক পরিবারের সাথে প্রতারনার করেছিলেন দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস মালিক শাহাদাৎ হোসেন। সে সময়ে ওই সাংবাদিক এজেন্সির বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম উল্লেখ করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তারপরও বন্ধ হয়নি হজ যাত্রীদের সাথে প্রতারনা।
জানা গেছে, 'হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২০' এর খসড়ায় হজে অনিয়মে এক কোটি এবং ওমরাহর ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা সহ হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা বা অর্থ আত্মসাৎ করলে তা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি কোনো এজেন্সি যদি হজযাত্রী বা ওমরাহ পালনকারীকে অঙ্গীকার অনুযায়ী সেবা দিতে ব্যর্থ হয় বা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে তা অনিয়ম বা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার কারণে কোনো এজেন্সি পরপর দু'বার তিরস্কৃত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী দুই বছরের জন্য তার লাইসেন্স স্থগিত হবে।
দি ইসলামিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস মালিক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তারা প্যাকেজে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্যাকেজের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারা স্পেশাল গেলে তাদের আলাদা হোটেল রুম দেওয়া হতো। আলাদা রুমের টাকা আমরা কেন পরিশোধ করব। আর খাবার না দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রিয়াল কিনতে হয়েছে ২৯ টাকা ৭০ পয়সায়। এছাড়া ব্যাংক খরচ ও যাতায়াত খরচ থাকার পরও তাদের সাড়ে ১৮ হাজার রিয়াল প্রদান করা হয়েছে।