ফাস্ট ফুড খেয়ে ‘হাইব্রিড’ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তরুণরা
দেশ জনপদ ডেস্ক|১৮:৩০, নভেম্বর ১৪ ২০২২ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। তাদের একমাত্র ভরসাস্থল বান্দ রোডের অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতাল। গত এক যুগে ৮৫ হাজার রোগী সদস্য হয়ে সেখান থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, রোগটির প্রধান কারণ অসচেতনতা ও ফাস্ট ফুড খাবার। এখন ফাস্ট ফুড খেয়ে তরুণদের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এটিকে ‘হাইব্রিড ডায়াবেটিস’ নাম দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
১৬ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডা. মনজুর উর রহমান বলেন, বিজ্ঞানীরাই হাইব্রিড ডায়াবেটিস নামকরণ করেছেন। এই জাতীয় রোগীরা টাইপ ওয়ান কিংবা টাইপ টু এর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকেন। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়ার পাশাপাশি আক্রান্তরা অলস সময় কাটানোর কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সীদের শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের অবস্থা টাইপ ওয়ান মনে হলেও তারা ওয়ান ও টু’র মাঝামাঝি অবস্থানে থাকেন। এ থেকে উত্তোরণে রুচির পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। একই সঙ্গে ফাস্ট ফুড বর্জন করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে জেলার ডায়াবেটিস রোগীদের সঠিক তথ্য নেই চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্টদের কাছে। হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন অনেকে। তবে প্রতিদিন জেলায় কতজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন কিংবা চিকিৎসা নিতে আসছেন সে তথ্য তাদের কাছে নেই।
বরিশালে ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতালের পথচলা শুরু হয় ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি। বান্দ রোডের ৭৪ শতাংশ জমির ওপর হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়। প্রথমে ডায়াবেটিক হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হলেও পরে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় জেনারেল হাসপাতাল। পাঁচতলা ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতালের আয় থেকেই চলছে এর কার্যক্রম। ভবনটি নির্মিত হয়েছে সরকারি অর্থায়নে।
হাসপাতালের যুগ্ম সম্পাদক ও দাতা সদস্য মাহাবুব মোর্শেদ শামীম বলেন, ‘মূলত আমার বাবা জীবিত অবস্থায় জমি দান করেন। পরবর্তীতে সেখানে বহুতল ডায়াবেটিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে কমিটির মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে।হাসপাতালে ১২০টি বেড রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে আড়াইশ ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ১৭ জন চিকিৎসক, ৪০ জন নার্স, ২০ জন আয়াসহ ২৩০ জনবল রয়েছেন। যারা আজীবন সদস্য হচ্ছেন তাদের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি ৫০ শতাংশ ফ্রি। সাধারণ সদস্যদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার টাকা দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে পাঁচ হাজার ডায়াবেটিস রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক যুগে ৮৫ হাজার ডায়াবেটিস রোগী সদস্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে প্রতিদিন সাত-আট নতুন রোগী আসেন। মাঝেমধ্যে এর সংখ্যা ১০-১২ জন হয়।’
১৬ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডা. মনজুর উর রহমান বলেন, 'সচেতনতার অভাব, অগোছালো জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নির্দেশ অনুসারে হলুদসহ বিভিন্ন গাছ-গাছালি খেয়ে ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। এর পাশাপাশি হাইব্রিড ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা হয়েছে। যার প্রধান কারণ ফাস্ট ফুড। যাকে হাইব্রিড ডায়াবেটিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা এই ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এরা কোনও কাজ করবে না। কিন্তু ঠিকই ফাস্ট ফুড বেশি খেয়ে থাকে। এতে তাদের শরীরে ইনসুলিন কাজ করে না। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।'
ডা. মনজুর বরিশাল নগরীর দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা দেন। পাশাপাশি ঝালকাঠিতে সপ্তাহে ছয় দিন এবং বানারীপাড়া ও বাকেরগঞ্জে সপ্তাহে একদিন চেম্বার করেন। তিনি ওসব চেম্বারে প্রতিদিন গড়ে ৯-১২ জন নতুন রোগী পাচ্ছেন। যারা ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন তারাও একই পরিমাণ নতুন রোগী পাচ্ছেন বলে তার ধারণা।
ডা. মনজুর বলেন, ‘এই রোগ হলেই রোগীরা সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। ওই রোগীর শরীরে যখন অন্য রোগ বাসা বাঁধে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তখন পরীক্ষা করে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শনাক্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা নেন না। ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হওয়ার পরই তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এ ধরনের রোগী অহরহ পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা দেওয়া হলেও শতকরা অর্ধেক রোগী ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চলেন না। তারা বিকল্প খুঁজতে থাকেন। সেখানে হোমিওপ্যাথিক থেকে শুরু করে গাছ-গাছালি, আয়ুবের্দিক, এমনকি কাঁচা হলুদও চিবিয়ে খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। যখন দেখে তা থেকে কোনও কাজ হয় না, তখন আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রোগীরা। ডায়াবেটিস থেকে একেবারে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং নিয়ম মেনে জীবনযাপন করেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে জানান তিনি।