সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ৩০০ বছরের পুরনো মসজিদ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:১৫, নভেম্বর ১১ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মুঘল শাসনামলের এক অন্যতম নিদর্শন উপজেলার রানীপুর গ্রামে অবস্থিত ৩০০ বছরের পুরনো মিঞা বাড়ি শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে ‘মিঞা বাড়ির মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে মসজিদটি। তবে সঠিক তদারকি,সংস্কার ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এর সৌন্দর্য্য। অযত্নে অবহেলায় ঝোপঝাড়ের মধ্যে পড়ে থাকা মোগল আমলের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এটি। উপজেলা সদর সুবিদখালী থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে রানীপুর মিঞাবাড়ীর অবস্থান। এলাকার লোক মুখ থেকে জানা য়ায়, এই মিয়া বাড়ি ছিল মুঘল আমলের শিবন খার জমিদারির একাংশ। রানীপুর মিয়াবাড়ির জমিদার ছিলেন, আরমান আলী শাহী। তিনি মজিদটি নির্মাণ করেন এবং তার নাম অনুসারে এই মজিদের নাম রাখেন শাহী জামে মসজিদ। কিন্তু বর্তমানে জমিদার আরমান আলীর বংশধরদের নানাবিধ সমস্যার কারণে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মসজিদটি এখন সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দেখা গেছে, এক গম্বুজ বিশিষ্ট আরমান আলী জামে মসজিদটি চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত। মসজিদটির মূল ভবন চারপাশে ২০০ বর্গফুট বিশিষ্ট। উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। চার কোনায় চারটি মিনার রয়েছে। একতলা মসজিদটি নিখুঁত কারুকার্যবেষ্টিত। মসজিদের ভেতরে ৩০ থেকে ৪০ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের ভেতরের ও বাইরের সমস্ত পলেস্তরা এখন খসে পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে মসজিদের সৌন্দর্য্য। মসজিদের বাহির দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। মসজিদের পূর্বপাশে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে একটি বড় দীঘি রয়েছে। মুসল্লিরা এখানে ওজু ও গোসল করেন। সুপরিকল্পিতভাবে মসজিদটি নির্মিত হলেও সঠিক তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে মসজিদটি। স্থানীয় বাসিন্দা মো: হান্নান সরদার জানান, মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করলে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ইসলামি স্থাপত্যশিল্প হিসেবে টিকে থাকবে বহুদিন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কারণে মিঞা বাড়ির মসজিদটির সৌন্দর্য বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে মিঞা বাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কার করেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: মিজানুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এই শৈল্পিক স্থাপনাজুড়ে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। শুক্রবার জুম্মা হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই দেখতে আসেন। মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরনো নকশা অনুক্ষণ রেখে সংস্কার প্রয়োজন। প্রাচীন এই স্থাপনার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই মসজিদটির সংস্কার হোক তা আমি চাই। মির্জাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসা: তানিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘পুরোনো যেকোনো কিছু আমাদের কাছে ঐতিহ্য বহন করে। পত্নতাত্ত্বিক হিসেবে আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়ভাবে অর্থ সংকুলান হলে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। যেন নতুন প্রজন্মের কাছে এটা সুন্দর স্থাপনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়।’ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে সকল প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, শিগগরই সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।