বাংলাদেশে অতীতের মতো নির্বাচন চায় না যুক্তরাষ্ট্র

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৫১, নভেম্বর ০৮ ২০২২ মিনিট

রিপোর্ট দেশজনপদ ॥ বাংলাদেশে অতীতের মতো নয়, সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র৷ সেটা কীভাবে সম্ভব- বাংলাদেশ সফর করে তাই জানার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার৷ এই বিষয়ে তিন দলের তিন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি৷ ওই তিন রাজনৈতিক নেতা হলেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিদেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা৷ রবিবার বিকেল ৩টা থেকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আয়োজনে এই বৈঠক হয়৷ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এটা ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলাপ, বাইরে বলার নয়৷'' আর শাম্মী আহমেদকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷ তবে জাতীয় পার্টির মাসরুর মাওলা বৈঠক নিয়ে কথা বলেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন মন্ত্রী নিজে কথা বলেছেন কম৷ তিনি মূলত আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা কী ভাবছি, পরিবেশ, পরিস্থিতি, আমাদের চাওয়া এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন৷ আমরা যার যার অবস্থান থেকে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি৷ বৈঠকে কেয়ারটেকার ও নির্বাচনকালীন মধ্যবর্তী সরকার নিয়ে মার্কিন মন্ত্রীর সামনেই আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শাম্মী আহমেদ তর্কে লিপ্ত হন৷ তখন মার্কিন মন্ত্রী দাঁড়িয়ে তাদের থামিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা অতীতের কথা শুনতে চাই না৷ সামনে একটি ভালো নির্বাচন কীভাবে হতে পারে তা শুনতে চাই৷'' জাতীয় পার্টির নেতা জানান, ‘‘আমি বলেছি জাতীয় পার্টি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না৷ আর এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেও নির্বাচন চায় না৷ রাজনীতিতে অনেক দূরত্ব আছে৷ আগে সেগুলো দূর করতে হবে৷ সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে৷ তারপর নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিগত দুইটি নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বলেন, এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই না৷ আমরা কেয়ারটেকার বা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় মধ্যবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই৷'' বিএনপি নেতা তাদের মিছিল, সমাবেশে বাধা দেয়ার কথাও তুলে ধরেন বলে জানান জাতীয় পার্টির এই নেতা৷   শাম্মী আহমেদ বিএনপি নেতার কথার জবাবে যা বলেন তা তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির এই নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘শাম্মী আহমেদ এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচনের কথা বলেন৷ তিনি বলেন, আমরা কেয়ারটেকার চাই না৷ অতীতে কেয়ারটেকার সরকার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া- দুই নেত্রীকেই কারাগারে নিয়েছে৷ তিনি সংবিধানে নির্বাচন ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, নির্বাচনের সময় এই সরকারই হবে নির্বাচনকালীন সরকার৷ বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কাজ করছে৷'' তিনি অতীতের অনেক বিষয় উল্লেখ করে বিএনপির আন্দোলনের সময় সহিংসতার কথাও তুলে ধরেন৷ জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, ‘‘মার্কিন মন্ত্রী মূলত সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন অতীতের মতো নির্বাচন চায় না যুক্তরাষ্ট্র৷ আর তিনি নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণের কথা বলেছেন৷'' ‘‘তবে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব তার ব্যাপারে মার্কিন মন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি৷ আমাদের মতামতই শুনেছেন৷ শুধু কেয়ারটেকার নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কথার সময় তিনি বলেছেন এটা তো বিশ্বে পপুলার নয়৷ দুইটি দেশে এই ব্যবস্থা আছে,'' জানান জাতীয় পার্টির এই নেতা৷ এদিকে, শনিবার ঢাকায় আসার পরদিন রবিবার তিন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠকের আগে সকালে মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছি৷ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷'' শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কি উপায় আছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয় আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এ দেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷'' আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা যা বলছেন মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে কথা বলাকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন৷ তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী৷ স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগ থাকবে৷ তারা তো জানে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নাই৷ সংসদে বিরোধীদের অংশগ্রহণ নাই৷ তাই তারা কথা বলছে৷ এর আগেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিকবার এনিয়ে কথা বলেছেন৷ মার্কিন আরেকজন মন্ত্রীও কথা বলেছেন৷'' তিনি মনে করেন, ‘‘এটা সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ৷ সরকার এখন চাপে আছে৷ বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ নিশ্চয়ই তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তারা চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ৷ তারা তো এর আগে বাংলাদেশ নিয়ে এভাবে কখনো কথা বলেনি৷'' ‘‘শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছে মাথা নত করেন না’’ আর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগও চায় সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন৷ এজন্য সরকার কাজ করছে৷ কিন্তু এটা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করছে না৷ নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর৷ এখন বিএনপি নির্বাচনে জেতার নিশ্চয়তা না পেলে নির্বাচনে আসবে না৷ এখন বিদেশি কেউ কি তাদের নিশ্চয়তা দিতে পারবে? নিশ্চয়তা দিতে পারে একমাত্র বাংলাদেশের জনগণ৷'' দেশে কি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে? থাকলে মার্কিন মন্ত্রী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছেন কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি হয়তো তাদের কাছে বলেছে, ধরাধরি করছে, লেখালেখি করেছে৷ তাই তারাও এসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কথা বলছে৷'' তার কথা, ‘‘এটা কোনো চাপ না৷ যে কেউ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলতে পারে৷ তবে শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছে মাথা নত করেন না৷ কোনো কিছু যৌক্তিক হলে তিনি এমনিতেই তা গ্রহণ করেন তাকে চাপ দিয়ে কিছু করানো যায় না৷'' যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার শনিবার ঢাকায় আসেন৷ সোমবার তিনি ঢাকা ছেড়েছেন৷ এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর৷