ভারতের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী এই নারী
রিপোর্ট দেশজনপদ ॥ নয়না রেধু। এই নারীই ভারতের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী। তিনি এখনও পর্যন্ত তার টুইটার হ্যান্ডল থেকে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার টুইট করেছেন।
নয়না একজন তারকা চিত্রগ্রাহক। রণবীর সিংহ-সহ একাধিক তারকার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী শুটিংয়ে ছবি তোলেন তিনি। বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেছেন নয়না। অভিনেতা রণবীর সিংহের করা নিরোধের বিজ্ঞাপনেও নয়না প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করেছেন।
ভারতের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী হিসাবে, আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা পাওয়ার পর যে ব্যাপক রদবদল হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তা নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছেন নয়না। এই মাইক্রোব্লগিং সাইটের বিবর্তন এবং নতুন পরিবর্তন নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
নয়না জানান, ২০০৬ সাল নাগাদ বাজারে একমাত্র নামী ব্লগিং সাইট বলতে ছিল অর্কুট। টুইটার তখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হয়নি। সেই বছরই টুইটারে যোগ দেওয়ার জন্য মাইক্রোব্লগিং সাইটের তরফে একটি ইমেল পেয়েছিলেন নয়না। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং ভারতের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী হয়ে ওঠেন।
নয়না বলেন, ‘আমার মনে আছে, আমি টুইটারের তরফে ইমেলের মাধ্যমে একটি আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম এবং সেই সময়ে এটির নাম ছিল ‘টুটার’। পরে এর বানান পরিবর্তন হয়। আমার কোনও ধারণা ছিল না যে পরবর্তী কালে এটি পৃথিবীর অন্যতম বড় মাইক্রোব্লগিং সাইট হয়ে উঠবে।’
নয়না আরও বলেন, ‘সেই সময়ে আমি ছাড়া ভারতের আর কেউ টুইটার ব্যবহার করতেন না। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলতাম, তারা বেশির ভাগই ছিলেন টুইটারের কর্মচারী বা তাদের বন্ধুস্থানীয়। তারা একে অপরকে বার্তা দিতেন। তখন আমি মুম্বইতে কাজ করতাম এবং আমি ভাবতাম যে আমি তাঁদের সঙ্গে কী কথা বলতে পারি। অ্যাকাউন্ট খুললেও প্রাথমিক ভাবে প্রথম দেড় বছর সেই ভাবে টুইটার ব্যবহার করিনি।’
এক সময় অবধি নয়না নিজেও জানতেন না যে তিনিই ভারতের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো কৃতিত্ব ছিল না। এটি সম্পূর্ণ কাকতালীয়। ভারতের টুইটার ব্যবহারকারী হতে আমাকে কোনও কঠিন পরিশ্রমও করতে হয়নি৷ আমি জানতামও না যে, আমি ভারতের প্রথম টুইটার ব্যবহারকারী। আমেরিকার তরফে প্রথম ১৪০ জন টুইটার ব্যবহারকারী সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় আমার নাম ছিল।’
নয়না বর্তমানে একজন সক্রিয় টুইটার ব্যবহারকারী এবং তার প্রোফাইলেও ‘ব্লু টিক’ রয়েছে। যা ইলনের টুইটার অধিগ্রহণের পর আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। সকলের মনেই প্রশ্ন ছিল যে ‘ব্লু টিক’-এর ভবিষ্যৎ কী? এর মাঝেই ইলন ঘোষণা করেন যে ব্যবহারকারীরা যদি তাঁদের অ্যাকাউন্টে ‘ব্লু টিক’ চান, তা হলে তাদের মাসিক ৬৫০ টাকা করে দিতে হবে।
নয়না নিজের টুইটারের ‘ব্লু টিক’ ধরে রাখতে মাসিক অর্থ প্রদান করবেন কি না জিজ্ঞাসা করা হলে নয়না বলেন, ‘কিসের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে এখনও কোনো স্পষ্টতা নেই। এই বিষয়ে কিছু স্পষ্টতা পাওয়া গেলে তবেই আমি কোনও রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারব। টুইটার একটি বেসরকারি সংস্থা। এই সংস্থার তরফে ‘ব্লু টিক’ দেওয়া হয় যাতে সমাজে পরিচিত মুখেদের অ্যাকাউন্ট আসল কি না তা যাচাই করা যায়। গত ১৬ বছরে আমি যদি এর জন্য টাকা না দিয়ে থাকি, তা হলে এখন কেন দেব?’
টুইটারের ‘ব্লু টিক’ নিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত ভারতে কী প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে নয়না স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি মনে করি না এতে কোনও প্রভাব পড়বে কারণ সাধারণ ভাবে ‘ব্লু টিক’-এর আহামরি কোনো প্রয়োজন নেই। এ ছাড়াও, যাদের প্রয়োজন এবং সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা কেবল এটি কিনবেন। সাধারণ জনগণের উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
টুইটারের মাধ্যমে স্বাধীন ভাবে মতপ্রকাশ সম্পর্কে তিনি কী অনুভব করেন, সে সম্পর্কেও জানিয়েছেন নয়না। তার মতে, একটি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা টুইটারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যদিও টুইটার এখন এমন একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে যেখানে আমরা খবর দেখি এবং চারপাশে কী ঘটছে, তা জানতে পারি। কিন্তু আশপাশে প্রচুর ভুয়ো খবরও রয়েছে। আমি মনে করি টুইটারকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় না। আমাদের নিজেদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। সমস্যা হল যে হেতু আমরা সবাই ব্যস্ত তাই অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের টুইটারের উপর নির্ভর করতে হয়।’
নয়নার মাইক্রো-ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে যোগদানের পর থেকে প্রায় দু’দশক পেরিয়ে গিয়েছে। ইলনের কাছে টুইটারের মালিকানা আসার আগেও টুইটারে অনেক পরিবর্তন দেখেছেন নয়না।
নয়না যোগ করেন, ‘এর আগেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এর আগে টুইটারে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ছিল এবং মানুষের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা যেত। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কথা বলতাম, কে আমাদের টুইটগুলি পড়ছে তা নিয়ে নয়। এখন টুইটারে পোস্ট করার আগে মানুষ অনেক চিন্তাভাবনা করে। আর সেই কারণেই এই মাইক্রোব্লগিং সাইটের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আমি নিজেও কেবল কাজের জন্য টুইটার ব্যবহার করি।’
টুইটারে নিজের সম্পর্কে নয়না লিখে রেখেছেন যে তিনি এক জন ‘চিত্রগ্রাহক, শিল্পী এবং অভিজ্ঞতা সংগ্রাহক’। ১৬ বছর ধরে টুইটার ব্যবহার করার পর নয়নার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। যদিও এই সংখ্যা এমন কিছু নয়।
নয়নার কথায়, ‘আমি কখনওই ফলোয়ারদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম না। আমি যদি চাইতাম, তা হলে বিভিন্ন উপায়ে ফলোয়ার বাড়াতে পারতাম। কিন্তু আমার জন্য, কে আমাকে অনুসরণ করছে, তা সব সময়ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা আমাকে নতুন কিছু শেখাতে পারে কি না, তাও দেখার চেষ্টা করি। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলি, তাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে চিনি।’