পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কুয়াকাটার রাস মেলা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:১১, নভেম্বর ০৮ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  কুয়াকাটায় মঙ্গলবার সকালে সূর্যোদয় লগ্নে পুণ্যস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। রাস মেলায় অংশ নিতে সোমবার সকাল থেকেই পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা আগমন শুরু করেন। কুয়াকাটা পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। লাখো পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল গোটা সৈকত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোটা সৈকতকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছিল। মঙ্গলবার উষালগ্নে সমুদ্রস্নানে গঙ্গাপূজা দেয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো নর-নারীরা তাদের হাতে মোমবাতি, আগরবাতি, পান ও নারিকেলের ছোবড়া নিয়ে গঙ্গাদেবীর নামে ছেড়ে দেয়। আগে থেকেই মানতকারীরা মাথার কেশ ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত, পিণ্ডদান ও পরলোকগমন মা, বাবার জন্য প্রার্থনা করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুণ্যের আশায় পুণ্যার্থীরা বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করছেন। সৈকতের বালিয়াড়িতে ঠাকুরের কাছে দীক্ষা নিচ্ছেন। পুণ্যার্থীরা পূর্ণিমার মধ্যে উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠ করে সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ করেছে এ বছরের রাস পূজা। কুয়াকাটায় স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদন-মোহন সেবাশ্রমে রাধা-কৃষ্ণের সতের যুগল প্রতিমা দর্শণ করবে। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মতে, জাগতিক পাপ মুছে যাবে সমুদ্রস্নানে। পাপ পূর্ণতায় পরিণত হবে। এ মনোবাসনায় পূর্ণিমা তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ কুয়াকাটায় সমুদ্রে পুণ্যস্নান করেন। পুণ্যের আশায় এ বছরও সৈকতে সমাগম হয়েছে দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থী, দর্শনার্থী ও সাধু-সন্নাসীরা। এর আগে রাতভর কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজার্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানামা কীর্তনে মেতে ওঠে সনাতনীরা। অপরদিকে রাখাইন মাঠে উন্মুক্ত কনসার্টের আয়োজন করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা মেয়র। এতে সারারাত আগত পর্যটকদের মাতিয়ে রাখে কণ্ঠশিল্পী বিন্দুকনা, বনি ইয়ামিনসহ আরো অনেকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটেছে এ উৎসবকে ঘিরে। বিগত কয়েক বছর করোনার প্রভাবে তেমন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। কুয়াকাটার রাস উৎসবের প্রধান সমন্বয় কাজল বরণ দাস বলেন, প্রায় দুশ’ বছর পূর্ণিমা তিথিতে এ রাসলীলা উৎসব ও মেলা চলে আসছে। দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের লালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। মাদারীপুর থেকে আসা বিশ্বজিৎ বলেন, বাবা মারা গেছেন কয়েক মাস হলো। তার নামে মানত করেছিলাম। পূর্ণিমার তিথিতে রাসপূজার সময় মাথা ন্যাড়া করব, সে মানত রক্ষা করতে পেরে ভালো লাগছে। পুন্যস্নানে আসা শ্যামল দাস বলেন, নানা রকম সমস্যার মধ্যেই এ বছরটা পার করেছি। সামনের দিনগুলো যাতে ভালো কাটে, সে মনোবাসনা নিয়ে কুয়াকাটায় পুণ্যস্নান করতে এসেছি। ভালোভাবেই ধর্মীয় আচার পালন করতে পারায় নিজের কাছে ভালো লাগছে।