শেবাচিমে করোনা পরীক্ষা মেশিনের সক্ষমতা খুবই কম

কামরুন নাহার | ২২:০৫, এপ্রিল ১৭ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিমে) কলেজে করোনা পরীক্ষার জন্য পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন- পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হলেও পরীক্ষার সক্ষমতা খুবই কম। পাশাপাশি নেই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল। গত ৩০ মার্চ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে পৌঁছায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন। এরপর থেকে দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে পিসিআর স্থাপনের কাজ। প্রতি ২৪ ঘন্টায় দুইশ’ রোগীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষা ও দক্ষ জনবল থাকলে সর্বোচ্চ তিন ঘন্টার মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব। এমনটাই জানিয়েছিলেন শেবাচিম হাসপাতালের পিসিআর মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা। তবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল করোনা পরীক্ষাগার (ল্যাব) চালু করা হলেও পরেরদিন রাতেই ল্যাবটির পিসিআর যন্ত্রের বায়োসেফটি কেবিনেট নামের একটি যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হলেও এর পরীক্ষার সক্ষমতা কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। ফলে আগে যেখানে ল্যাবটিতে প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হতো বর্তমানে সেখানে ২০টির বেশি করা যাচ্ছেনা। এছাড়াও মেডিকেলে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে একজন চিকিৎসক ও দুজন টেকনিশিয়ান আছেন। পিসিআর পরিচালনায় এদের নেই কোন অভিজ্ঞতা। দরকার অভিজ্ঞ কমপক্ষে ৩ জন চিকিৎসক এবং ৫ থেকে ৬ জন টেকনিশিয়ান। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এ ব্যাপারে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অপরদিকে গত এক সপ্তাহ আগে অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে দলে দলে মানুষের গ্রামে ফেরার ঘটনায় ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এরপর হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে দুইজন করে চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে করোনা চিকিৎসার বিষয়ে তিন দিনের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অন্য চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের অনলাইনে তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নিজেদের, রোগী ও অন্যদের নিরাপত্তা কতোটা নিশ্চিত করে কাজটি করতে পারবেন সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে হত সোমবার বরিশালে একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছয় জেলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৪৬টি জরুরি রেসপন্স টিম গঠণ করা হয়েছে। এসব টিমে একাধিক চিকিৎসক ছাড়াও নার্স, স্বাস্থ্য সহকারীদের রাখা হয়েছে। রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৩ জন টেকনোলোজিস্টকে। তবে কারোরই আগের অভিজ্ঞতা নেই। অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এ কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া ছয় জেলার কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর নেই। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সংকটাপন্ন রোগীদের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। এ বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ৫৫৮টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রয়েছে ১৫০টি শয্যা। বাকি ছয় জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ৪০৮টি শয্যা হয়েছে। পুরো বিভাগের মধ্যে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে শুধু আইসিইউ সুবিধা আছে। এখানে ১৮টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। সম্প্রতি আরও ১০টি ভেন্টিলেটর এই হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলো স্থাপনের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসকসহ অন্যান্য যেসব সংকট থাকুক না কেন আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়েই করোনা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি কোনো সমস্যা হবেনা।