বড় ভাইয়ের স্ট্যাটাস ভাইরাল তোলপাড়

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:২৪, অক্টোবর ২৭ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ র‌্যাব’র ক্রসফায়ারে যুবদল নেতা মাহবুবুল আলম মেহেদী নিহত হন বরিশালে ১৮ বছর আগে র‌্যাব’র ক্রসফায়ারে যুবদল নেতা মাহবুবুল আলম মেহেদী নিহত হন। তার হত্যার পেছনে বিএনপি নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে দাবি করে তার বড় ভাই শফিকুল আলম গুলজার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার মহানগর যুবদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিশনার মেহেদীর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়। এটি ভাইরাল হলে বরিশালে তোলপাড় শুরু হয়। গুলজারের অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সরোয়ার বলেন, সে সময় এরকম অভিযোগ ওঠার পর গুলজারই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক পেজে গুলজার লেখেন, ‘আজ আমার ভাইয়ের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কেন আমার ভাইকে জীবন দিতে হলো? প্রিয় বরিশালবাসী আপনাদের আজ জানাতে চাই-কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বরিশালে তখন যারা রাজনীতির গডফাদার ছিলেন তাদের পরোক্ষ যোগসাজশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।’ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রথমেই তিনি সাবেক সিটি মেয়র সরোয়ারকে দায়ী করেন। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘চুরি-ডাকাতি-খুন-রাহাজানি এহেন কোনো অপরাধ নেই-যা সে (সরোয়ার) করেনি। কালাম খুন থেকে শুরু করে মেহেদীসহ অনেক খুনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। মেহেদীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় তখনকার বিএনপির অনেক নেতার প্রতিহিংসার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।’ সরোয়ারের পাশাপাশি বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তৎকালীন শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খসরু, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন জুম্মন, কেএম শহিদুল্লাহ ও হাসানকে দায়ী করেন তিনি। স্ট্যাটাসের শেষে তিনি লেখেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন।’ ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশালের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শফিকুল আলম গুলজার বলেন, সাদা চোখে সবাই দেখেছে আমার ভাই র‌্যাব’র ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। কিন্তু কে না জানে যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন গুলি হয়েছিল, গোলাগুলি নয়। মেহেদীর জনপ্রিয়তায় যারা ভিত হয়ে উঠেছিলেন তারাই র‌্যাবকে দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছে। তখন সরোয়ার-আলালরা ছিলেন ক্ষমতায়। তারাসহ যারা আমার ভাইকে হত্যা করিয়েছেন-তাদের সবার বিরুদ্ধে আমি ধারাবাহিকভাবে লিখব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেহেদীর মৃত্যুর পর হত্যা মামলা করেছিলাম। সেই মামলা আমাদের অজান্তে খারিজ হয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি থামব না। গুলজারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল সদর আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এগুলো আসলে মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। মেহেদী ছিল আমাদের দলের ছেলে। ক্রসফায়ারে তার মৃত্যুর পর আমরা আন্দোলন করেছি। বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। তখনও গুলজারের পরিবারের দু-একজন এরকম অভিযোগ ছড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু গুলজারই এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এখন কেন তিনি এসব উলটা-পালটা বলছেন-তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মেহেদীর হত্যাকাণ্ড সত্যিকার অর্থেই একটি রহস্যজনক ঘটনা। এটির পেছনে কি কারণ বা কারা জড়িত সেটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। আর এ দাবিতে শুরু থেকে তার পরিবারের সোচ্চার থাকা উচিত ছিল। আমি বরিশাল শহরে কখনও রাজনীতি করিনি। আমি তখন গ্রামে রাজনীতি করেছি। ১৮ বছর পর গুলজার কেন একথা বলছেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কেন তিনি আমার নাম বললেন-তা বুঝতে পারছি না। তবে আমি যে কারও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমি তার এ বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।