ঐক্যবদ্ধেও পরাজয়, দায় নিচ্ছে না কেউ!

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:২৫, অক্টোবর ২৬ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মোহনবধ কাব্য রচিত হলো পটুয়াখালীতে। ১৭ অক্টোবর ভোটের ফলাফল শেষে দলীয় প্রার্থী খলিলুর রহমান মোহনের ছেলে তাহের রহমানের ফেসবুকে দেওয়া এমন স্ট্যাটাসে হাজারো প্রশ্ন-উত্তর পর্বের জন্ম নিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি এখানে নতুন নয়। জামায়াত-বিএনপি নয়, বারবার পদ বঞ্চিতরাই সরকার দলীয় প্রার্থীকে মরণ কামড় দিচ্ছে। এবার মাত্র ৯৬ ভোটে বিদ্রোহীর প্রার্থীর কাছে মোহন পরাজয়ে দ্বন্দ্বের সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। এসব বিদ্রোহীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে ভাগ বসাতে পারে! জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর এমন শঙ্কায় ভুগছেন এখানকার আওয়ামী লীগ। অপরদিকে মোহন বধ রচনার কৈফিয়তে ভুগছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে রাজনৈতিক চরিত্র হননের প্রয়াস। সংসদ নেতা আ স ম ফিরোজের বাউফল আসনকে আওয়ামী লীগের দুর্গ বলা হয়। অথচ ওই উপজেলার ২০৯ ভোটের ১৪৭ ভোটই বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানকে দেওয়া হয়েছে। ওই আসনে সংরক্ষিত সদস্য পদে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছেন এমপি ফিরোজের ভাতিজি কামরুন্নাহার জেসমিন। আর সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন আ স ম ফিরোজের বলয়ে থাকা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শাহজাহান সিরাজ। বিজয়ী শাহজাহান সিরাজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সমভোট পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন ফরাজি। পরে লটারিতে হেরে যান জসিম। জসিম ফরাজি এমপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র জুয়েল ও আব্দুল মোতালেব বলয়ের। অপরদিকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হাফিজের নিজ গ্রামও বাউফল। সব মিলিয়ে একেবারে সোনায় সোহাগা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপি ও মেয়রের লোকজন মাইম্যান তৈরির করতে সদস্য পদ নিয়ে লড়াই করেছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে শুধু শো-আপ আর ফটোসেশন হয়েছে। তাছাড়া এমপি ফিরোজ ও মেয়র জুয়েলের দ্বন্দ্ব ও খুন-খারাবিতে ওখানকার আওয়ামী লীগে ভয়াবহ অবস্থা। তাছাড়া মোহন জেলা পরিষদ চেয়ারে থাকাকালীন ভাগাভাগি সংক্রান্ত ঘটনায় মোহনের কথিত ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল বাউফল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা পরিষদ সদস্য হারুন অর রশিদ। হারুন অর রশিদ এমপি ফিরোজের একনিষ্ঠ কর্মী। যে কারণে পুরনো হিসাবটাও এবার মিলিয়ে নিয়েছেন তারা। বাউফলে ভরাডুবি প্রসঙ্গে এমপি আ স ম ফিরোজ  বলেন, আমি নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেশে ফিরেও চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি, দায়িত্বে ছিলেন মেয়র জুয়েল সাহেব। তাকে জিজ্ঞেস করেন। অনেক জায়গায় তো সমন্বয় হয়েছে, এখানে হয়নি কেন? বিদ্রোহী প্রার্থী তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। দায়িত্ব নিয়ে যাদের কাজ করার কথা,তারা তা করেনি। তাই এমনটা হয়েছে। আপনি চেয়ারম্যান নয়, সদস্য জেতাতে কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে এমপি বলেন, মোহন যে কয়টা ভোট পেয়েছেন, সেটা আমার জন্য, তদন্ত করলে প্রমাণ পাবেন। তবে নির্বাচনে কেন ডিজাস্টার হয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। মাইম্যান তৈরিতে কাজ করার প্রসঙ্গে বাউফল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ আমাকে শুধু পৌর এলাকা সংলগ্ন ৫টি ইউনিয়নের দায়িত্ব দিয়েছিল। বাকি ইউনিয়ন গুলো এমপি সাহেবের। জসিম ফরাজি আমার প্রার্থী হলেও আমি চেয়ারম্যানের জেতাতে কাজ করেছি। মোহন যে ভোট পেয়েছেন তা আমার বলয়ের ভোট। যা দৃশ্যমান। অহেতুক অভিযোগ দিলেই হবে না। অনুসন্ধান বলছে, পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনটিও আওয়ামী লীগের দুর্গ। অথচ সেখানেও কম ভোট পেয়েছেন মোহন। দলে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা সদস্য পদ নিয়ে বেশি মাতামাতি করেছেন। চেয়ারম্যান পদে শুধু শো-আপ করেছেন। একই অবস্থা মির্জাগঞ্জ উপজেলায়ও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামীর একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয়, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং সব আসনের এমপি-মেয়র ঐক্যবদ্ধ হয়েও সরকার দলীয় প্রার্থী হেরেছেন। হেরে যাওয়ার কারণ শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তি ইমেজ। দল ও নেত্রীর নির্দেশনা নয়, ব্যক্তি ইমেজ টেকানোর লড়াই করছেন তারা। এসব প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর  বলেন, পৌর নির্বাচনে আমার পরাজয়ের কারণ ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নিষ্ক্রিয়তা। যে কারণে পৌর নির্বাচনে আমি হেরেছি, এবার জেলা পরিষদে মোহন। আমাদের ঐক্যবদ্ধতাও ছিল। কিন্তু কালো টাকার কাছে হেরে গেছি। এই প্রথা চলতে থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমাদের হেরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। এদিকে অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বিজয়ী হয়ে তার ফেসবুকে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ারকে জড়িয়ে রাজনৈতিক স্খলন জনিত পোস্ট করেন। যেখানে যুগ্ম সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৌমেন্দ্র চন্দ সৈলেনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। হাফিজের পোস্টের পরপর সৌমেন্দ্র চন্দ্র সৈলেনও হাফিজকে পাল্টা জবাব দিয়ে পোস্ট করেন। দুই ব্যক্তির ওই পোস্টে চলছে নানা মন্তব্য। ভোট শেষে কোনো কোনো প্রার্থী ভোট ক্রয়ের টাকাও ফেরত চেয়ে ফেসবুকে জানান দিচ্ছে।