বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগে দুই দিন বাস ধর্মঘটের ঘোষণা
দেশ জনপদ ডেস্ক|১৮:৩৯, অক্টোবর ২৬ ২০২২ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবিতে আগামী ৪ নভেম্বর থেকে দুই দিন বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ।
সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাসরেক ও সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে স্বাক্ষরিত এই আবেদনটি মঙ্গলবার বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। বাস মালিক সমিতির নেতারা দাবি আদায়ে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
অন্যথায় ৪ নভেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ ও অভ্যন্তরীণ বাস টার্মিনাল রূপাতলী থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
চিঠিতে মালিক সমিতির নেতারা উল্লেখ করেছেন, ২০২০ সালে ২৯ মে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, ভটভটি, টমটম, আলফা, মাহেন্দ্র, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে এসব অবৈধ যানবাহন এখনো চলাচল করছে। এ জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
এমতাবস্থায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের জন্য ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন তারা। ওই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ৪ থেকে ৫ নভেম্বর দুই দিন দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বিরত রাখা হবে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান বুধবার দুপুরে বলেন, এ ধরনের আবেদন করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এটা করা হবে সেটাও আমরা নিশ্চিত ছিলাম। কারণ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং সর্বশেষ খুলনায় এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে সরকার গণসমাবেশ বানচাল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি, এখানেও হবে না।
মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও থ্রি হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা না হলে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বুধবার দুপুরে বলেন, মঙ্গলবার বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে, সড়ক নিরাপদ কল্পে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অবৈধ যান নসিমন করিমন ভটভটি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, সকল প্রকার থ্রি হুইলারসহ রোড পারমিটবিহীন দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপির অনুলিপি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, র্যাব-৮ অধিনায়ক, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে গণসমাবেশ করার লক্ষ্যে বরিশাল নগরের বেলস্ পার্ক (বঙ্গবন্ধু) উদ্যান চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনও করেছে বিএনপি।
এখন দলটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতেই এই অপকৌশল নেওয়া হয়েছে। খুলনায়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামেও এই একই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো সফলতা আসেনি। বরং জনতার স্রোত সরকারের দেউলিয়াত্বকেই প্রকাশ করে দিয়েছে। এখানেও এমন অপকৌশল নেওয়া শুরু হয়েছে।
তবে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মহাসড়কে যাত্রী ও পরিবহনের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে।
এই দাবিতে আমরা অনেক আগে থেকেই আন্দোলন করে আসছি। বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশ আয়োজন কমিটির সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, বাস মালিকরা এতদিন দেখেনি সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল করেছে। বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে তাদের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। বিএনপির গণসমাবেশ ব্যাহত করার পাঁয়তারা।