২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এখনো মেলেনি সহায়তার চাল, জেলেপল্লীতে দুর্দিন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩১, অক্টোবর ১৯ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘অবরোধ দিছে আজকে ১১ দিন, গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ঘরে যা ছিল তা খাইছি। আজকে স্বামী বাজারে গ্যাছে তিনশো টাকা হাওলাদ করে চাল কিনতে। চাল নিয়ে আসবে তারপর রান্না করবো’, এভাবেই নিজ ঘরের দরজার বসে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটার জেলেপল্লীর বাসিন্দা জেসমিন আক্তার। মঙ্গলবার কুয়াকাটা জেলেপল্লী ঘুরে প্রায় অধিকাংশ পরিবারেই এমন দৃশ্য দেখা যায়। জেসমিনের মতো পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বেশিরভাগ জেলে পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। তবে এই অবরোধে প্রতি জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলে এখন পর্যন্ত সেই চাল পাননি জেলেরা। যে কারণে অনেক জেলে পরিবার এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ১০ বছর ধরে জেলে পেশায় কাজ করা মহিবুল্লাহ চার সন্তানের বাবা। সন্তানদের লেখাপড়া ও ভরণপোষণ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তারপরেও ১১ দিন কোনোরকমে চললেও মঙ্গলবার রান্না করার মতো কোনো চাল ছিল না ঘরে এমনটাই জানান তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার। জেসমিন বলেন, অবরোধে যে চাল দেওয়ার কথা তা দিলে হয়তো আজকে রান্না করা যেত কিন্তু এখন বসে আছি স্বামীর অপেক্ষায়। চাল নিয়ে আসলে রান্না হবে, নয়তো হবে না। মহিবুল্লাহর প্রতিবেশী আমির মাঝি বলেন, ৪৫ বছর সাগরে মাছ ধরি কিন্তু তিন বছর আগে চাল পেয়েছি। তারপর আর চাল পাই না। কয়েকবার মেয়র-কাউন্সিলরের কাছে ঘুরেছি কিন্তু এখনো আমার নামে কার্ড হয়নি। পাঁচ লাখ টাকা ঋণ আছে। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় কিন্তু এখনো কোনো ইনকাম নেই। যে অবস্থা হয়েছে তাতে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। কুয়াকাটায় জেলেদের নিয়ে কাজ করা আশার আলো সংগঠনের সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, জেলেরা আসলে ভালো নেই। কারণ বছরে দুটি অবরোধ, বৈরি আবহাওয়ার প্রভাব এরপরে সরকারি অনুদানটুকুও জেলেরা ঠিকমতো পাচ্ছে না। তাহলে কীভাবে চলবে জেলেদের পরিবার? কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, আমরা আগামী দু-একদিনের মধ্যেই পুরো উপজেলায় নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩৮০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করবো। সরকার এবছর পাঁচ কেজি করে চাল বাড়িয়ে দিয়েছে জেলেদের। তবে যেসব জেলে কার্ড নিয়ে বিড়ম্বনায় আছেন তারা যোগাযোগ করলে আমরা সমাধান করে দেবো। তিনি আরও বলেন, আমরা গত কয়েকমাস ধরে খুব নিবিড়ভাবে তালিকা করছি। আশা করছি, এই তালিকায় সঠিকভাবে সব জেলের নাম উঠে আসবে। তারপর থেকে আর কোনো জেলেই বঞ্চিত হবেন না। গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় এবং বিনিময় সম্পূর্ণ বেআইনি হিসেবে আরোপ করে মৎস্য বিভাগ।