লোহালিয়া সেতু নির্মাণ শেষ হয়নি ১১ বছরেও

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৩৩, অক্টোবর ১৬ ২০২২ মিনিট

লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনো কাজ শেষ হয়নি। নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ১১ বছরেও পটুয়াখালী শহরসংলগ্ন লোহালিয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। উচ্চতা নির্ধারণসহ সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে একের পর এক নানা জটিলতা তৈরি হওয়ায় একদিকে নির্মাণ ব্যয় যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে নদীর দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন তালুকদার বলেন, এলাকার মানুষকে নদী পার হয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দীর্ঘদিনেও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলাসহ ভোলার সড়ক পথে যোগাযোগে সহজ করতে ২০০৮ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা-কলাগাছিয়া সড়কের লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪৬৪ মিটার দীর্ঘ এই গার্ডার সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪৬ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর কার্যাদেশ নিয়ে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণের শুরুতেই ৪ দশমিক ৯৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দশমিনা উপজেলার বেতাগী-সানকিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ঝন্টু বলেন, জেলা শহরে যাতায়াত করতে লোহালিয়া নদীতে খেয়া পারাপার হতে হয় উপজেলার মানুষের। খেয়াঘাটে নানান রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। এলজিইডি সূত্র জানায়, শুরুতে লোহালিয়া সেতুর উচ্চতা বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছিল ৯ দশমিক ৫৭ মিটার। সেই অনুযায়ী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। তবে লোহালিয়া সেতু অনুমোদনের সময় পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হয়নি। সেতু নির্মাণের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষে হওয়ার পর দেখা দেয় জটিলতা। ফলে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আন্তমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লোহালিয়া সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদারকে কাজের অনুকূলে ২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে ভবিষ্যতে লোহালিয়া নদী দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করবে। লোহালিয়া সেতুর কম উচ্চতা হওয়ায় তখন সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছিল। তবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেতুর উচ্চতা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই সেতুটির আবার নির্মাণকাজ চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম পটুয়াখালী সফরকালে লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সেতুটি দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সেতুটি নির্মাণ শেষ হলে পটুয়াখালী সদরের সঙ্গে লোহালিয়া ইউনিয়নসহ বাউফল ও দশমিনা উপজেলা এবং পাশের ভোলার লালমোহন উপজেলাসহ আশপাশ উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে লোহালিয়া নির্মাণাধীন সেতুর মাঝখানে ফাঁকা দেখা যায়। সেখানে ইস্পাতের কাঠামো বসানোর কথা। ইস্পাতের প্লেটগুলো সেতু এলাকায় রাখা আছে। এলজিইডির পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাঈনুল ইসলাম বলেন, সেতুর দুই পাশে আরসিসি কাঠামো থাকলেও নদীর মাঝখানে একটি ইস্পাতের কাঠামো থাকবে। ইস্পাতের কাঠামোর দৈর্ঘ্য হবে ১০৭ মিটার। মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং ইস্পাতের কাঠামোর নির্মাণ ব্যয় ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে মূল সেতুর নির্মাণকাজ ৯৯ ভাগ শেষ হয়েছে। চীনের রেডিয়ান মেরিন ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড ও দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সেতুর মাঝখানের ইস্পাতের কাঠামো নির্মাণকাজ করবে। এলজিইডির পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, সেতুর মাঝখানে ইস্পাতের কাঠামো নির্মাণ করতে হলে নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ করতে হবে। গত ২৭ জুন আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তিন মাস সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। এরপরই দ্রুত কাজ শুরু হবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।